ওঁরা আর পাঁচ জনের মতো নন। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে। জেলা প্রশাসন বিষয়টি ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে কী নথি জমা দিতে হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পরে, যে সব নথি তাঁদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে নির্বাচন কমিশন মান্যতা দেবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
কোচবিহারের সাবেক ছিটমহল মধ্য মশালডাঙার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘‘ছিটমহল বিনিময় চুক্তি হওয়ার পরে সরকার আমাদের ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ও রেশন কার্ড দিয়েছে। এ ছাড়া, যাঁরা ও পার (বাংলাদেশ ভূখণ্ডে থাকা ভারতীয় ছিটমহল) থেকে এখানে এসেছেন, তাঁদের ‘ট্র্যাভেল পাস’ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে, আমাদের কারও কাছে কোনও নথি নেই। এগুলোতে কাজ না হলে, সমস্যা হবে।’’
দিনহাটায় বেশ কয়েকটি সাবেক ছিটমহল রয়েছে। সেখানে ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের সঙ্গে এক সময়ে জড়িত দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, এখন বিজেপিতে। দীপ্তিমান বলেন, ‘‘সাবেক ছিটমহল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কী নির্দেশ, আমার জানা নেই। কারণ, ভারতবর্ষের কোনও জেলার ইতিহাস কোচবিহারের সঙ্গে মেলে না।’’ তাঁর দাবি, সংবিধান সংশোধনের ১৯ নম্বর ধারায় সাবেক ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ১৬,৭৭৭ জন মানুষকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভোটদাতা রয়েছেন প্রায় ১২ হাজার। দীপ্তিমানের বক্তব্য, ‘‘সাবেক ছিটমহলবাসী পদ্ধতিগত কারণে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়লে, সংশ্লিষ্ট বিধানসভায় নির্বাচন কতটা বৈধ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’’
এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে নথিকে প্রামাণ্য মানবে, তা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছে নেই। সে ক্ষেত্রে তাঁদের কী হবে, তা নিয়ে আমরা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করব। এত জন ভোটদাতার নাম বাদ দেওয়া যাবে না।’’প্রশাসন সূত্রেরও খবর, এসআইআর-এর জন্য নির্বাচন কমিশন যে ১১টি নথিকে প্রামাণ্য বলে মানছে, তার কোনওটি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছে নেই। বিনিময়ের আগেও সাবেক ছিটমহলের অনেক মেয়ের ভারতীয় ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। তাঁদের কাছেও নথি নেই। কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক শান্তনু বালা বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সমস্ত তথ্য কমিশনে পাঠিয়েছি। নির্দেশের অপেক্ষা করছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)