Advertisement
E-Paper

নাটকে মজে রয়েছেন বিশ্বনাথ

ভদ্রলোক যে বালুরঘাটের মানুষ, তা তাঁর অবসর কাটানোর ধরন দেখেই বোঝা যায়। শিয়রে ভোটের ফল নিয়ে সবাই যখন উত্তেজনায় ভিতরে ভিতরে ফুটছেন, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী তখন সন্ধ্যাটা কাটাচ্ছেন নাটকে।

অনুপরতন মোহান্ত

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০২:৫৪
পার্টি অফিসে কাজের মধ্যে বিশ্বনাথ।—নিজস্ব চিত্র।

পার্টি অফিসে কাজের মধ্যে বিশ্বনাথ।—নিজস্ব চিত্র।

ভদ্রলোক যে বালুরঘাটের মানুষ, তা তাঁর অবসর কাটানোর ধরন দেখেই বোঝা যায়। শিয়রে ভোটের ফল নিয়ে সবাই যখন উত্তেজনায় ভিতরে ভিতরে ফুটছেন, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী তখন সন্ধ্যাটা কাটাচ্ছেন নাটকে।

সেই ১৭ এপ্রিল ভোটপর্ব চুকে যাওয়া ইস্তক বালুরঘাটের জোট প্রার্থী বিশ্বনাথবাবু নাটকেই মজে রয়েছেন। নাট্যতীর্থ ও নাট্যমন্দিরে হর ভট্টাচার্যের ‘দ্রোহ’ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ দেখলেন তিনি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করে সোজা পার্টি অফিসে। দুপুর দেড়টা-দু’টো পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ফের বাড়িতে গিয়ে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম। দুপুরে কোনওদিন ঘুমোন না। দলীয় কর্মসূচি থাকলে খেয়েই বেরিয়ে পড়ছেন।

পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ বিশ্বনাথবাবু এ বারে কোচের ভূমিকা নিয়ে পুরো টিমকে ভোটের মাঠে নামিয়ে নিজেও চালিয়ে খেলেছেন। ডিফেন্সে মূল খেলোয়াড় বিমল সরকারকে রেখে দলের জেলা নেতা সাধন সরকার, সুচেতা বিশ্বাস, কালী কর, পারিজাত সাহা, রথীন সরকার, নারায়ণ ভৌমিকদের মতো একগুচ্ছ নেতানেত্রীকে সামনে রেখে এগিয়েছেন। কংগ্রেসের গোপাল দেব, সিপিএমের কুট্টি চন্দদের কাছে পেয়ে গ্রামের মাঠে স্ট্রাইকার তৈরি করেছেন। সঙ্গে প্রযুক্তি বিভাগকে সক্রিয় করে অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ থেকে দ্রুত অভিযোগ দায়ের করার কাজে নিজের একমাত্র ছেলে অর্ণবের উপর দায়িত্ব সঁপেছেন। সকলে যে যার কাজ উতরে দিয়েছেন বলে বিশ্বনাথবাবু নিজেই জানাচ্ছেন। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই, ভোটের ফল নিয়ে কোনও উত্তেজনা রয়েছে। আড্ডায় সুযোগ পেলেই ভোট অঙ্কের চর্চার ফাঁকে এক টিপ নস্যি নিয়েই ঢুকে পড়ছেন নাট্যচর্চায়। শহরের সাধনা মোড়ে আরএসপির জেলা কার্যালয়ে বসে বিশ্বনাথবাবু বলে চলেন হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে নাটক করার পুরনো দিনের সেই কথা। অভিনীত নাটকের নামের তালিকা দিতে থাকেন—করুণা, কলোমাটির কান্না, গফুর, ডাকঘর...।

মাঝে মধ্যে আসছে ভোটের কথা। কর্মীরা বলেছেন, চিঙ্গিশপুর অঞ্চল থেকে বিশ্বনাথবাবু এক হাজার লিড পাবেন। বিনশিরা অঞ্চল থেকে তিন হাজার হবে। পাঞ্জুল, জামালপুর, অমৃতখন্ড অঞ্চল থেকে ৬ হাজার থাকবে। কর্মীদের আশ্বাস, বালুরঘাট শহরে তিন হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও পরোয়া নেই। হিলির পাঁচটি এবং বালুরঘাটের দু’টি অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ হাজার লিড থাকবে।

যা শুনে বিশ্বনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কর্মীরা যেখানে এক হাজার ভোট লিড থাকবে বলছেন, আমি সেখানে ৫০০ ভোট কম পাব ধরে এগোচ্ছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বালুরঘাট ব্লকের তিনটি অঞ্চল—ভাটপাড়া, অমৃতখণ্ড এবং চিঙ্গিশপুরের মধ্যে একমাত্র ভাটপাড়া অঞ্চলে বারোশোর মতো ভোট কম থাকবে। চিঙ্গিশপুরেও আমি ৫০০ ভোট কম ধরেছি। অমৃতখন্ডের লিড পাবো। বাকি থাকলো হিলি ব্লকের পাঁচটি অঞ্চল।’’ অন্তত ৫ হাজার ভোটের লিড থাকবে আশা করছেন বিশ্বনাথবাবু।

তারপরেই চিনি দেওয়া লাল চা খেয়ে ফের নাটক নিয়ে পড়লেন। দলীয় কার্যালয়ে তখন তাঁর পাশে বসে দলের নেতা কালী কর, নারায়ণ ভৌমিক, সাধন সরকার, অলোক চক্রবর্তীরা মুচকি হাসছেন বিশ্বনাথবাবু কালো মাটির কান্না নাটকের সেই পুরনো আমলের লম্বা ডায়লগ শুনে। করুণা নাটকের ফুটপাতবাসিনীর দুর্ভোগের ছবি ব্যাখ্যা করে ফের ফিরলেন হর ভট্টাচার্যের গল্প অবলম্বনে দ্রোহ নাটকের বিষয় নিয়ে।

মুখে বলছেন, ‘‘টেনশন? এখন আর এই বয়সে হয় না।’’

assembly election 2016 Vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy