শিলিগুড়ি কাওয়াখালি ময়দানে বাজির দোকান। ছবি: বিনোদ দাস।
শহরের স্টেশন ফিডার রোড এলাকার ঘটনা। গত ক’দিন ধরেই রাত হলে একটি বহুতল আবাসনের ছাদ থেকে ভেসে আসছে শব্দবাজির আওয়াজ। রাস্তার কুকুরের দলকে কালভার্টের কোণে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। শেষে জানা গেল, এক দল যুবক দীপাবলির দিন সাতেক আগে থেকেই রাতে বহুতলের ছাদে উঠে বাজি ফাটানো শুরু করেছেন। তাঁদের বোঝানোর পরে এবং কিছুটা ধমকের সুরে এক প্রতিবেশীর আপত্তির পরে গত দু’রাতে আওয়াজ মেলেনি। কিন্তু আগামী রবিবার, কালীপুজোর রাতে ঠিক কী ঘটতে চলেছে, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা।
প্রতিবেশীদের কয়েক জন জানান, গত বার দীপাবলিতে রাত ৩টে অবধি এলাকার বহুতলগুলির ছাদে দেদার শব্দবাজি, আতসবাজি ফেটেছিল। মনে হচ্ছিল, যেন এক ভবনের সঙ্গে আরেক ভবনের ‘খেলা’ চলছে। কেউ এক বার ফাটালে, অন্য পক্ষ দু’বার ফাটিয়েছে। নীচের অলিগলিতে ভ্যান নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন পুলিশকর্মীরা। সেবক রোডে ধরাও হয় কয়েক জনকে। পুলিশের হিসাবে, এক রাতে শিলিগুড়িতে কয়েক কোটি টাকার বাজি ফেটেছিল, যার বড় অংশই নিষিদ্ধ শব্দবাজি। এ বারও শব্দবাজির ব্যবহার আর দূষণের রেকর্ড গড়ায় শিলিগুড়ি এগিয়ে থাকবে বলেই আশঙ্কা শহরবাসীর একটি বড় অংশের।
কালীপুজো-দীপাবলির আগেই মাটিগাড়া থানার অভিযানে দু’দফায় যে পরিমাণ বাজি উদ্ধার হয়েছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, শহরে ঢুকে পড়েছে শব্দদানব। শিলিগুড়িতে চুপিসারে শব্দবাজির ঢোকা আর তার জেরে, দীপাবলির রাতে আতঙ্ক এখনই ঘিরে ধরছে বহু মানুষকে। অসুস্থ ও প্রবীণ মানুষ থেকে শিশুরা, বাড়ির পোষ্য থেকে বাতাসের দূষণ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। পুলিশ ধরপাকড়ের কাজ চালিয়ে গেলেও অফিসারদের চোখ এড়িয়ে প্রতি বছরই শিলিগুড়ি দেশের বড় বড় শহরের সঙ্গে শব্দবাজি ফাটানোয় পাল্লা দেয়। তার ব্যতিক্রম এ বারও হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত ঝাড়খণ্ড, বিহার, কলকাতা থেকে নিষিদ্ধ বাজি শিলিগুড়িতে বাসে, ট্রেনে বা গাড়িতে ঢোকে। বিভিন্ন এলাকার বহুতলের নীচে গুদামে বিপজ্জনক ভাবে তা মজুত করা হয় বলে অভিযোগ। আশ্রমপাড়া, পাঞ্জাবিপাড়া, হাকিমপাড়ায় গত কয়েক বছরের এমন বাজি মজুতের ঘটনা সামনে এসেছে। যে কারণে কয়েক জায়গায় নাকাতল্লাশিও চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া, বাজার এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাজারের দোকান থেকে নির্দিষ্ট ঠিকানা বলে দিয়ে গুদাম থেকেও শব্দবাজি পাচারের ঘটনা ঘটে। সে দিকেও নজর রেখেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি রুখতে শহরে অভিযান চলছে।’’ নিষিদ্ধ বাজি প্রতিরোধে দীপাবলির আগে প্রতিটি থানাকে কমিশনারেটের তরফে অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে।
পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘শহরে যে ভাবে নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট, বাইরে থেকে দেদার নিষিদ্ধ বাজি শিলিগুড়িতে ঢুকছে। এখনই না আটকানো গেলে, এ বছরও শব্দদানবের জ্বালায় ভুগতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy