Advertisement
E-Paper

সিপিএম কর্মীর বাড়িতে গুলি

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের খাস তালুকেই এ বার সিপিএমের এক কর্মীর বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০২:৫৫
এখানেই গুলি লেগেছিল। দেখাচ্ছেন কোচবিহার বাবুরহাটে বাম কর্মীর সজল খাসনবিস।

এখানেই গুলি লেগেছিল। দেখাচ্ছেন কোচবিহার বাবুরহাটে বাম কর্মীর সজল খাসনবিস।

ভোটের আগেও উত্তপ্ত ছিল কোচবিহার। ভোটের পরেও তার আঁচ কমল না।

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের খাস তালুকেই এ বার সিপিএমের এক কর্মীর বাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ভোটের দিনই এলাকার নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মেজাজ হারিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মীকে তিনি যাস করে চড় মারেন। তৃণমূল সূত্রেই জানানো হয়েছে, তখনই বোঝা যায়, হতাশা গ্রাস করায় মেজাজ চড়েছে দলের জেলার সেনাপতির। সেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল সেই রাতেও। ভোট মেটার পরেই বৃহস্পতিবার রাতে নাটাবাড়ি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

কোচবিহার কোতোয়ালি থানার বাবুরহাট এলাকায় ওই ঘটনায় শুক্রবার ওই ব্যাপারে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তির নাম সজল খাসনবিস। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্মী সজলবাবু নাটাবাড়ি কেন্দ্রের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএম প্রার্থী তমসের আলির পোলিং এজেন্টের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ ওই ব্যাক্তির বাড়ি লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি করা হয়। দরজা ভেদ করে গুলি দেওয়ালে লাগে। তবে গুলি কারও শরীরে লাগেনি। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বাবুরহাট এলাকায় ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে সিপিএম। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “বাড়ির লোকেরা একটি গুলির খোল পুলিশের হাতে দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। খোঁজ নিচ্ছি।”

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সজলবাবু এলাকায় দলের কট্টর সমর্থক বলে বরাবর পরিচিত। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তাকে ভোট না দেওয়ার জন্যও শাসানো হয়। তারপরেও বাবুরহাটের রামকৃষ্ণ বয়েজ হাইস্কুলে সিপিএম প্রার্থীর হয়ে পোলিং এজেন্টের কাজ করেন। ভোটপর্ব মেটার পরে রাতে বাড়িতে ফেরেন। রাত দশটা নাগাদ এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দোতলার ঘরে বসে তিনি দাবা খেলছিলেন। সে সময় আচমকা গুলির শব্দ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি দরজা ভেদ করে দেওয়ালে এসে লাগে। সিপিএমের নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী তমসের আলি এ দিন ওই বাড়িতে যান। তমসেরবাবু বলেন, “নাটাবাড়ি এলাকা জুড়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পরিকল্পিত ভাবে সজলবাবুর বাড়িতে গুলি চালানো হয়। ওই রাতেই পুলিশকে বিষয়টি জানান হয়। শুক্রবার অভিযোগও করা হয়েছে।”

দরজায় গুলির দাগ।

তমসেরবাবুর অভিযোগ, “নাটাবাড়ি বিধানসভা এলাকাতেই বেশি সন্ত্রাস চলছে। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তাই কোনও ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “জেলা জুড়ে বাম জোটের পোলিং এজেন্ট, কর্মীদের ওপর তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বাবুরহাটে ওই পোলিং এজেন্টের বাড়িতে গুলি চালানর ঘটনাটি মারাত্মক উদ্বেগের। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বাবুরহাট এলাকায় ধিক্কার মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।” সজলবাবু বলেন, “পোলিং এজেন্টের কাজ করায় এমন সমস্যায় পড়তে হবে ভাবিনি। এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দাবা খেলছিলাম। আচমকা গুলির শব্দে কেঁপে উঠি। গুলির খোলও মিলেছে। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।”

তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, ওই ঘটনায় দলের কেউ জড়িত নন। তৃণমূলের নাটাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী তথা দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। পুরো বিষয়টি সিপিএমের ‘গট আপ গেম’। আগেই বরং নাটাবাড়িতে তমসেরবাবুরা সন্ত্রাস চালাতেন। এখন প্রচার পেতে ‘গট আপ গেম’ করে মনগড়া অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি এলাকায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজে কোনও ভাবে গুলি চালিয়েছেন কি না, সেটাও তদন্তে ভাল করে দেখা দরকার।’’

রাজনৈতিক তরজা যাই থাক, গোলমালকে কেন্দ্র করে কোচবিহারে অবশ্য গুলি চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। এ বার বিধানসভা ভোটের প্রচারে বেরোন কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নগেন্দ্রনাথ রায়কে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বরাত জোরে বেঁচে যান নগেন্দ্রনাথবাবু। কয়েক মাস আগে কোচবিহারের পুন্ডিবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তৃণমূল কর্মী নারায়ণ মহানায়েক খুন হন। ওই ঘটনায় বিজেপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। এবার বিধানসভা নির্বাচনে ওই গুলিকান্ডে অভিযুক্ত সুকুমার রায় বিজেপি’র টিকিটে জেল থেকে কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের নজরদারির ঢিলেমির সুযোগ নিয়েই আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা বেড়েছে। কোচবিহার শহর লাগোয়া বাবুরহাট এলাকাতে আগে সে ভাবে গুলি চালানর অভিযোগ অবশ্য ছিল না। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় তাই এলাকার বাসিন্দাদের চিন্তা বেড়েছে। কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ঘটনা যাই হোক, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা যে বাড়ছে তা ওই ঘটনায় স্পষ্ট হচ্ছে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশের বাড়তি উদ্যোগ দরকার। পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘‘ভোটের মুখে পরপর বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ওই ব্যাপারে লাগাতার অভিযান জারি রয়েছে। বাবুরহাটে ‘পাইপগান’ থেকে গুলি চালান হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। সেটি কার তা দেখা হচ্ছে।’’

ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

CPM fired TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy