E-Paper

তিস্তা ফুঁসছে, বন্যার আশঙ্কা

সিকিমের থেকে প্রবল বেগে নেমে আসছে তিস্তা। ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তার দু’পারে। জরুরি সর্তকতা জারি করেছে সেচ দফতর।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ ০৮:২৪
Cap: ক্রান্তির চ্যাংমারীতে তিস্তা নদীর জল ঢুকে ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাধের উপর।

Cap: ক্রান্তির চ্যাংমারীতে তিস্তা নদীর জল ঢুকে ৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বাধের উপর। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।

সকাল ৯টা। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা নদীখাতের একাংশ শুকনো, চর তখনও জেগে রয়েছে। বেলা বাড়তেই বদলে গেল ছবিটা। দুপুর দেড়টা নাগাদ তিস্তা সেতু লাগোয়া নদীর দু’দিকে জেগে থাকা সব চর জলে ডুবে গেল। প্রবল বেগে বইতে শুরু করে তিস্তা। সেতুর নীচে নদীতে পাকিয়ে উঠতে দেখা গেল ঘূর্ণিস্রোত। ফুলেফেঁপে ওঠা নদী অন্তত পাঁচটি জনপদে ধাক্কা মারছে। বৃহস্পতিবারের ছবি। সিকিমে বৃষ্টির জেরে সমতলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছে গতিপথ বদলানো তিস্তা।

নাগাড়ে জল নামছে পাহাড় থেকে। ব্যারাজের গেটে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তাকে। বর্ষার গোড়াতেই অন্তত তিন হাজার কিউসেক (সেকেন্ডে জল প্রবাহের ইউনিট) জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে গজলডোবা ব্যারাজ থেকে। এই সময়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার কথা। কিন্তু সিকিমের থেকে প্রবল বেগে নেমে আসছে তিস্তা। ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তার দু’পারে। জরুরি সর্তকতা জারি করেছে সেচ দফতর। বাতিল হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সেচ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সমস্ত কর্আমী ও আধিকারিকদের ছুটি। তিস্তা নদীর দু’ধারে মাইকে ঘোষণা করে বাসিন্দাদের নদী থেকে দূরে সরে যেতে বলা হয়েছে এ দিন। নিষেধ করা হয়েছে নদীতে মাছ ধরতে যেতেও।

সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, “একাধিক জায়গায় তিস্তা নদী বাঁধে বা জনপদে ধাক্কা মারছে। পাহাড় থেকে এত জল নামছে যে ব্যারাজে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। তার ফলে সমতলে প্রভাব পড়েছে। সেচ দফচরের আধিকারিকদের সরেজমিনে পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে।”

এ দিন জলঢাকা নদীতে হলুদ সর্তকতা জারি করা হয়েছে। ময়নাগুড়ির বেতগাড়ায় নদীর জল ঢুকছে। জলপাইগুড়ির মান্তাদরি, বার্নিশ, লালটঙে তিস্তার জল ঢুকেছে। যদিও এ দিন বিকেলের পরে ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ খানিকটা কমেছে বলে দাবি। এ দিকে, পাহাড়ের সঙ্গে সমতলেও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। জলপাইগুড়িতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। জল বাড়তে শুরু করেছে জলপাইগুড়ি শহরকে দু’ভাগে ভাগ করা করলা নদীরও। তিস্তার জল অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে করলা উপচে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “সব ব্লকে ব্লকে সতর্কতা জারি রয়েছে। নৌকো থেকে শুরু করে উদ্ধারসামগ্রী প্রস্তুত। বাসিন্দাদের নদীর পার থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।” এ দিন
বিকেলে ময়নাগুড়িতে জলঢাকা নদীর বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক।

জলপাইগুড়ির বাগরাকোট পঞ্চায়েতে গত বুধবার গভীর রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। এ দিন দুপুর পর্যন্ত জল ঢোকা বন্ধ হয়নি। প্রায় ৩০০ পরিবার এখানে বাস করেন। এর থেকে আর ১০ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই গজলডোবার ১২ নম্বর বসতি এলাকা। ওতলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের এই গ্রামে সকাল থেকেই গ্রামবাসীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনার কাজ করছে প্রশাসন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sikkim Teesta River

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy