শেষ পর্যন্ত বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসেই যোগ দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা। কলকাতায় বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্য দফতরে যোগদান-পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যাশা মতোই উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকায় ‘অনুপ্রেরণা’র কথা বলেই দলবদল করলেন তিনি।
দলবদল করেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, আলিপুরদুয়ারের বর্তমান বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ বার্লা। কলকাতায় বার্লার হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তার পরেই বার্লার দাবি, “শুভেন্দু অধিকারী ও মনোজ টিগ্গাদের নেতৃত্বে বিজেপি এগোবে না। দিলীপদা’র (ঘোষ) মতো নেতাকেও ওঁরা কোণঠাসা করে দিলেন।” শুভেন্দুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘উনি এক বছর আগে থেকেই তৃণমূলে আছেন। যে ভাবে চিত্রনাট্য সাজিয়ে দিয়েছে, সে ভাবেই বলেছেন!’’
আলিপুরদুয়ার থেকে ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন বার্লা। তার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন চা- বলয়ের এই নেতা। গত বছর লোকসভা ভোটে প্রার্থী-তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রকাশ্যেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করেন তিনি। সেই সূত্রেই যোগাযোগ হয় তৃণমূলের সঙ্গে। লোকসভা নির্বাচনের পরে আলিপুরদুয়ারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি সভায় হাজির হয়েছিলেন তিনি। সরকারি অনুষ্ঠানে সে বার অবশ্য রাজনৈতিক দলে যোগদান করানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত এ দিন যোগদানের পরে বার্লা বলেছেন, ‘‘বেশ কয়েক বার দিদির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তাঁকে বলেছিলাম, দলে এসে কাজ করতে চাই।’’
চা-শ্রমিকদের মধ্যে বার্লার প্রভাব আছে বলে মনে করে তৃণমূল। এই অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক অবস্থায় তা কাজে লাগতে পারেই বলেই তৃণমূল প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দলে নিয়েছে। দলবদল প্রসঙ্গে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে দায়ী করেছেন বার্লা। তাঁর অভিযোগ, নিজের লোকসভা কেন্দ্রে একটি হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আর্থিক বরাদ্দ হওয়ার পরেও কেন্দ্র থেকে তাঁকে জানানো হয় যে, বিজেপির রাজ্য সংগঠনের আপত্তি রয়েছে। তাই হাসপাতাল তৈরি সম্ভব নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগী বার্লার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে মামলার হুমকি দিয়েছেন। আর সাংসদ টিগ্গার জবাব, ‘‘সাংসদ থাকাকালীন জন বার্লার উদ্যোগে আলিপুরদুয়ার লোকসভায় একটি ইটও গাঁথা হয়নি! তখন তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলতেন। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই দল-বিরোধী কাজ করছিলেন উনি। এখন বোঝাপড়া করে তৃণমূলেই যোগ দিলেন।”
লোকসভার পরে বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের কাছে হেরে চা-বলয়ের মাদারিহাট আসন খুইয়েছে বিজেপি। এলাকার চা-শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিউইউ-এর একাংশে এখনও অনেক অনুগামী রয়েছেন বার্লার, যাকে কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার থেকে আমাদের সাংসদ মনোজ টিগ্গা নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। এখন জন বার্লা যেখানেই থাকুন, আনন্দে থাকুন, ভাল থাকুন। বিধানসভা নির্বাচনে উনি যদি বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তা হলে আমরা তাঁর বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দেব!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)