Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Ananta Maharaj

‘বাংলা ভাগ চূড়ান্ত’ দাবি করা অনন্তকে রাসমেলায় আমন্ত্রণ রবীন্দ্রনাথের, জল্পনা উত্তরে

শুক্রবারই নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে অনন্ত দাবি করেছিলেন, বাংলা ভাগ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরেই তাঁকে রাসমেলায় নিমন্ত্রণ, নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

জিসিপিএ নেতা অনন্ত মহারাজ এবং কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

জিসিপিএ নেতা অনন্ত মহারাজ এবং কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২ ২০:২২
Share: Save:

২৪ ঘণ্টা আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে বাংলা ভাগ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জিসিপিএ)-এর নেতা অনন্ত রায়। সেই অনন্তকেই এ বার কোচবিহার রাসমেলায় নিমন্ত্রণ জানানো হল। প্রেরক, কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। স্বভাবতই এ নিয়ে রাজার শহর কোচবিহারে শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা।

ঐতিহ্যবাহী রাসমেলায় কোচবিহার পুরসভার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অনন্তকে। শুক্রবারই অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথের সঙ্গে বৈঠক করে পৃথক রাজ্যের দাবি করেছিলেন অনন্ত। তার পরেই অনন্তকে সরকারি এই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা।

কোচবিহার জেলা তথা উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে রাজবংশী ভোটারদের প্রভাব রয়েছে। কোচবিহার জেলা তো বটেই এই এলাকার একাধিক আসনেও হার-জিত নির্ধারণ করার জায়গায় রয়েছেন রাজবংশীরা। তাদেরই একটি অংশের নেতা অনন্ত। বিগত দিনে বেশ কয়েকটি ভোটে অনন্ত সরাসরি বিজেপির পক্ষ নিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, কোচবিহার জেলা জুড়ে বিজেপির ফলও ভাল হয়েছিল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে অসমে গিয়ে অনন্তের গোপন ডেরায় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছিলেন খোদ অমিত শাহ। অনন্ত শিবির সেই সময় দাবি করেছিল, পৃথক রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু বাংলার ভোটে ভরাডুবি হয় গেরুয়া বাহিনীর। বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই তৃণমূলের তরফে অনন্তের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির দৌত্য শুরু হয়। ঘন ঘন তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ-সহ জেলার তৃণমূল নেতাদের একাংশকে। এমনকি, জিসিপিএ-র অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও। মমতা-অনন্তকে একমঞ্চে বসিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বীর চিলা রায়ের স্মরণ অনুষ্ঠান। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গিয়েছিল অনন্তকে। এই প্রেক্ষিতেই অনন্ত নিশীথের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ‘পৃথক রাজ্য হয়ে গিয়েছে’ বলে দাবি করে বসলেন।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করা অনন্তের পক্ষে বিজেপির ছোঁয়াচ এড়িয়ে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেমন কঠিন, তেমনই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে দাবি আদায় করাও কার্যত অসম্ভব। আবার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই বিজেপি ও তৃণমূল— দু’পক্ষই অনন্তকে কাছে রাখতে চায়। এই পরিস্থিতিতে ‘পৃথক রাজ্য হয়ে গিয়েছে’ দাবি তুললেও অনন্তকে দূরে সরিয়ে রাখতে নারাজ তৃণমূলের একটি অংশ। তারই ফলশ্রুতি, রাসমেলায় তাঁকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ। কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলায় সমস্ত বিশিষ্টজনেদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাই তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা অনর্থক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE