দায়ভার: মাঠে কাজে ব্যস্ত কুসুম চৌধুরী। মালদহে মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
মাথায় মাটি ভর্তি স্টিলের গামলা। মাটির ভারে নুয়ে পড়েছে এক রত্তি মেয়েটি। তবুও থেমে নেই পা। কারণ, দুপুর ১২টার মধ্যেই শেষ করতে হবে ক্যানেল খননের কাজ। তাই গ্রামের কাকা, কাকিমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মায়ের জবকার্ড নিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজে ব্যস্ত কুসুম চৌধুরী। কুসুম, পুরাতন মালদহের মুচিয়া চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। মঙ্গলবার থেকে স্কুল খুলছে জান না? ক্লাসের বদলে মাঠে কেন? জবাবে কুসুম বলল, ‘‘১০০দিনের কাজ সবদিন হয় না। আর একদিন কাজ করলেই মিলবে ২১২টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই ফিরব স্কুলে।’’ মাটি ভর্তি গামলা নিয়ে হেঁটে চলে কুসুম। দাঁড়ানোর সময় নেই তার।
কুসুমের মতোই মাঠে ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে ব্যস্ত ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির আরও দুই ছাত্রী রিঙ্কি চৌধুরী, নেহা সরকার। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জনেরই ক্লাসে রোল নম্বর রয়েছে ১ থেকে ২০ মধ্যে। স্কুল থেকে রিঙ্কিদের গ্রাম মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুরের দূরত্ব মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার। মাইকিং করে স্কুল খোলা নিয়ে প্রচার চালানো হয়েছে, দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। আপাতত স্কুলের পরিবর্তে মাঠের কাজ, তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামের সিংহভাগ পরিবারই দিনমজুর। বাড়ির মহিলাদের বড় অংশ কেউ আনাজ বিক্রি করেন, কেউ বা আবার বিড়ি বাঁধেন। লকডাউনে স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই কাজ হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছিল বহু পরিবার। এখন ফের কাজ শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে চলছে গ্রামে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ। তাতেই শামিল হয়েছে পড়ুয়ারা। বাড়ির প্রয়োজনে টাকার দরকার, জানাল তারা।
তাই বাবা, মায়ের জবকার্ড নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ওই স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা। রিঙ্কি বলল, ‘‘আর মাত্র দু’দিন কাজ করলেই প্রকল্প শেষ। সেই টাকা দিয়েই পড়ার খরচ জোগাড় হয়ে যাবে।”
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য রামলাল চৌধুরী বলেন, “ছোটদের কাজে নেওয়া ঠিক নয় জানি। তবুও পরিবারের কথা ভেবে, তাদের কাজ থেকে বাদ দিতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy