Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Spy

অঙ্কে পাকা মাথা, সেই গুড্ডুই যে ‘চর’ তা ভাবতে পারছেন না শিলিগুড়ির বাসিন্দারা!

শিলিগুড়ির দেবাশিস কলোনিতে ভাড়া থাকতেন বিহারের বাসিন্দা গুড্ডু কুমার। মহম্মদ শাকিল নামে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে এসটিএফের দাবি। বুধবার গুড্ডুকে গ্রেফতার করে এসটিএফ।

এসটিএফের জালে গুড্ডু কুমার।

এসটিএফের জালে গুড্ডু কুমার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৩৯
Share: Save:

অঙ্কে পাকা মাথা। সেই গুড্ডু কুমার যে চরবৃত্তিতেও ‘পাকা’ তা ভাবতে পারছেন না শিলিগুড়ির দেবাশিস কলোনির বাসিন্দারা! ওই এলাকাতেই ভাড়া থাকতেন গুড্ডু। বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের যে সব জায়গায় সেনাছাউনি রয়েছে সেখানে ঘুরে ঘুরে খবর সংগ্রহ করতেন গুড্ডু। তিনি পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করতেন বলেই এসটিএফের দাবি।

বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয় গুড্ডুর। এর পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে দেওয়া হয় এসটিএফের হাতে। দুপুরে এসটিএফ শিলিগুড়ির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেবাশিস কলোনিতে নিয়ে আসে তাঁকে। ওই এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন গুড্ডু। গোটা এলাকা তাঁকে নিয়ে ঘোরেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। গুড্ডুর ভাড়াবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে এসটিএফ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গুড্ডুর আসল নাম মহম্মদ শাকিল। এই নামেই তিনি যোগাযোগ করতেন পাকিস্তানের মাথাদের সঙ্গে।

শিলিগুড়ির যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন গুড্ডু, সেই বাড়ির মালিক সঞ্জয়কুমার সুশীল। তিনি পেশায় রেলের ইঞ্জিনিয়ার। বছর পাঁচেক আগে তিনি কিনেছিলেন বাড়িটি। তার পর থেকে ভাড়া দেওয়া শুরু করেন সেই বাড়িতে। বাড়িটিতে মোট ৭টি পরিবার থাকে৷ গুড্ডুও বছর দুয়েক ধরে ভাড়া রয়েছেন ওই বাড়িতে। গত মাস ছয়েক ধরে টোটো চালানো শুরু করেছিলেন তিনি। বাড়ির মালিক সঞ্জয়কুমারের টোটো ভাড়ায় নিয়ে চালাতেন গুড্ডু। প্রতিবেশীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম প্রথম সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। গুড্ডুর প্রতিবেশী অমল ঘোষ বলেন, ‘‘ওর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না আমরা কেউই। তবে মাস ছয়েক ধরে সে টোটো চালাত। তার আগে সাইকেল নিয়ে এলাকায় ঘুরতে দেখেছি। কারও সঙ্গে সে ভাবে কোনও কথাবার্তাও বলত না।’’

সঞ্জয়কুমার আরও বলেন, ‘‘উনি ঘর ভাড়া নেওয়ার সময় প্যান কার্ড, আধার কার্ড দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে দিয়েছিলেন বিএসসি পাশের শংসাপত্রের প্রতিলিপিও। বিহারের একটি বেসরকারি স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন তিনি। আমার মেয়েকে অঙ্ক কষাতেন গুড্ডু। অঙ্কের যে কোনও সমাধান তাঁর নখদর্পণে ছিল৷ কিন্তু কখনও বুঝতে দেননি যে, তিনি এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত। মাস ছ’য়েক আগে আমার টোটো নিয়ে চালানো শুরু করেন উনি। আমাকে বলেছিলেন, ‘বিহারে আমার পরিবার বলতে কেউ নেই।’ কিন্তু গত কাল গ্রেফতার হওয়ার পর বিহার থেকে তাঁর স্ত্রী এবং বাবা আমায় ফোন করেছিলেন।’’ গুড্ডুর সঙ্গে আর কারা জড়িত তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

সঞ্জয় কুমারের সেই বাড়ির আর এক ভাড়াটে দীপরাজ রায় বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ও মোবাইলে গেম খেলত। ওর ঘরেই বেশির সময় আমরা খেলতাম। কিন্তু যখন ওর ফোন আসত, তখন আমাদের সকলকে ঘর থেকে বার করে দিত। সেই কথা হয়ে যাওয়ার পর আমাদের আবার ঘরে ডাকত। কিন্তু ফোনে কথা বলার সময় ও কী ভাষায় কথা বলত তা বুঝতে পারতাম না।’’

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বাগডোগরার সেনা ছাউনি এলাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরতেন গুড্ডু৷ সেখান থেকে ছবি তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি নম্বরে পাঠাতেন বলেও গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে সেই তথ্য আসতেই তা পাঠানো হয় রাজ্য পুলিশের এসটিএফকে। এর পর গুড্ডুর উপর শুরু হয় নজরদারি৷ গত ১৫ দিন ধরে গুড্ডুর উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছিল এসটিএফ। অবশেষে বুধবার নিউ জলপাইগুড়ির নেতাজি মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। গুড্ডুর সঙ্গে যে পাকিস্তানের আর্থিক লেনদেনও হত, সে তথ্যও পাওয়া গিয়েছে এসটিএফ সূত্রে। গুড্ডুকে জেরা করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Spy Pakistan India Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE