শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন খারিজ। ফাইল ছবি।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুললেন অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদ সিংহের আইনজীবী। বৃহস্পতিবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে শুনানির সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, টাকার বিনিময়ে যে চাকরি দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণই হয়নি। তা হলে চার্জশিটের যে কথা বলছে সিবিআই, তা দিল কী ভাবে?
অন্য দিকে, এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদকে ‘প্রভাবশালী’ তকমা দিয়ে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেছে সিবিআই। সেই অভিযোগও উড়িয়ে শান্তিপ্রসাদের আইনজীবীর বক্তব্য, ‘প্রভাবশালী’ হলে গ্রেফতারই হতেন না তাঁর মক্কেল। আদালতে তিনি সিবিআই হেফাজতে বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন । আর এ সব যুক্তি দিয়েই শান্তিপ্রসাদের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী।
অন্য দিকে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়েরও জামিনের আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবী। দাবি করেছে, কল্যাণময়ের ‘কার্ডিয়াক’ সমস্যা রয়েছে। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আইনজীবী অশোককুমার সাহা দাবি করেছেন, গ্রেফতারের পর ১৩৪ দিন কেটে গিয়েছে। তাই যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। যদিও শান্তিপ্রসাদ, কল্যাণময়, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ৭ জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ করেছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁরা থাকবেন জেল হেফাজতেই।
বৃহস্পতিবার আদালত থেকে বেরিয়ে শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা একই ভাবে আগের মতোই আমার মক্কেলকে হেফাজতে রাখার আর্জি জানিয়েছে। ওরা আরও তদন্ত করে দেখছে যে, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে কি হয়নি! তার মানে এত দিন ওরা জানত না যে, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল কি না!’’ সিবিআইয়ের চার্জশিট নিয়েও প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘সিবিআই আরও বলেছে, যাঁদের এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে, বাই ফোর্স করছে। বিচারপতির কাছে দুটো বিষয় তুলে ধরেছি। এত দিন তদন্ত চলল যে, বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তা হলে টাকার বিনিময়ে যে চাকরি দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণই হয়নি। তা হলে চার্জশিটের যে কথা বলছে, তা দিল কী ভাবে? এত দিন হেফাজতে রাখলই বা কেন? আর ফোর্স ব্যবহার করে জেরা করা যায় না। সেটা কী ভাবে করছেন।’’
জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, শান্তিপ্রসাদরা ‘প্রভাবশালী’। তাঁদের ছাড়া হলে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী দাশগুপ্তের যুক্তি, ‘‘প্রভাবশালী হলে চার মাস জেলে থাকবেন কেন? আগেই তো প্রভাব খাটিয়ে সব বন্ধ করে দিতে পারতেন। গ্রেফতারই বা হবেন কেন?’’ সমাজকে প্রভাবিত করার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আইনজীবী বলেন, ‘‘আপনারা বলছেন, এঁদের জামিন দিলে সমাজ প্রভাবিত হবে। সব কেসেই তো সমাজ প্রভাবিত হতে পারে। শুধু এঁদের জন্য হবে কেন?’’
এর পর সিবিআই হেফাজতে লালনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন আইনজীবী দাশগুপ্ত। তিনি আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘লালন শেখের মৃত্যুর বিষয়টা তুলে এনেছি। সিবিআইয়ের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা যখন অভিযুক্ত হচ্ছেন, তখন তাঁরা বলছেন, আমরা ভুল ভাবে অভিযোগের স্বীকার। অথচ দেখা যাচ্ছে, যখন তাঁরা তদন্ত করছেন, তখন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে শয়ে শয়ে লোককে অভিযুক্ত করছেন। নিজেদের ক্ষেত্রে আইনের কথা বলছেন। অন্যের ক্ষেত্রে বলছেন না। আইন সকলের ক্ষেত্রেই সমান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy