পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান চার কন্যা। নিজস্ব চিত্র
ওঁরা ঠিক করেই রেখেছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে শুধু বিকেল নয়, সকালেও রেস্তরাঁ চালাবেন। কারণ, স্নাতক স্তরের পড়ার খরচ জোগাড় করতে হবে। বুধবার ওঁরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে ঘর-হারানো মেয়েদের রেস্তরাঁ এ বার খোলা থাকবে সকাল থেকেই। মিলবে প্রাতরাশ, দুপুরের খাবারও। বেশি ক্ষণ খোলা থাকলে বেশি বিক্রি হবে, আয় বাড়বে। তাতে পড়ার খরচ সামলাতে পারবেন ওঁরা।
প্রথমে হারিয়েছিল ঘর। পরে, বয়স আঠারো পেরোনোয় সরকারি নিয়মে হোমের আশ্রয়ও হারায়। বাড়ি ভাড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য রেস্তরাঁ খুলেছেন ওঁরা। পড়াশোনা ছাড়েননি। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে জলপাইগুড়ির এই তিন অনাথ মেয়েও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। আর এক জন একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করেছেন। সে ফলও বুধবার ঘোষিত হয়েছে।
অনামিকা আর রাখি ৫৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। ললিতা পেয়েছেন ৫৫ শতাংশ নম্বর। একাদশ শ্রেণি থেকে দ্বাদশে উত্তীর্ণ আপনা। জলপাইগুড়ির জেলা পরিষদ লাগোয়া কর্মতীর্থ ভবনে ওঁরা ‘এবং চা’ নামে একটি রেস্তরাঁ চালান। সকালে-দুপুরে স্কুলে বা টিউশন পড়তে যান। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে রেস্তরাঁ। তার পরে, বাড়ি ফিরে পড়াশোনা। বছরখানেক ধরে এমনই চলছে। পুজোর সময়, পয়লা বৈশাখের আগে-পরে রেস্তরাঁয় ভিড় থাকে। তখন পড়াশোনার ভাগ থেকেও সময় দিতে হয় রেস্তরাঁয়। অনামিকা বললেন, ‘‘রেস্তরাঁ চালাতে না হলে পড়াশোনায় বেশি সময় দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের খরচ চলবে কী করে! বাড়ি নেই, পরিবার নেই। থাকব কোথায়! খাবার পাব কোথায়!’’
ছোট থেকেই এই মেয়েরা অনুভব হোমে থেকেছেন। কেউ বাড়ির ঠিকানা মনে করতে পারেন, কিন্তু পরিজনের মুখ মনে পড়ে না। কেউ ছোটবেলার সম্পর্কের ডাকনাম মনে করতে পারলেও স্মরণে নেই, কোথায় ছিলেন। অনুভব হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন,‘‘সরকারি নিয়ম তো আছেই। কিন্তু মেয়েগুলো যাবে কোথায়! তাই আমরা ওদের কর্মতীর্থ ভবনে একটা ঘর জোগাড় করে দিয়েছি। সেখানেই রেস্তরাঁ চালি য়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ওরা।’’
ললিতার কথায়, ‘‘আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যাব। ঠিক করেই রেখেছিলাম, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে রেস্তরাঁর সময় বাড়াতে হবে। কারণ, পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে হবে। আগামী মাস থেকেই সারা দিন খোলা থাকবে আমাদের রেস্তরাঁ।’’ ওঁদেরই এক জন আফসানা ইতিমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ‘বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আফসানার পড়ার খরচও এই রেস্তরাঁ থেকেই চলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy