প্রতীকী ছবি।
শিল্প তালুকগুলিতে পড়ে রয়েছে প্রচুর ফাঁকা জমি৷ কিন্তু, শিল্পের দেখা নেই। কিন্তু এক সময় উত্তরবঙ্গে অর্থনৈতিক ভাবে সব থেকে সমৃদ্ধ শহর ছিল জলপাইগুড়িই।
চা বাগানের জন্যই জলপাইগুড়ির অর্থনীতি এক সময় ছিল শক্তপোক্ত। কাজের খোঁজে জলপাইগুড়িতেই আসতেন দূর-দুরান্তের মানুষ। এখন সেই চা বাগানেরই কিছু ধুঁকছে। তাই দেড়শো বছরে পা দিতে চলা জলপাইগুড়ির যুবক-যুবতীদেরই এখন কাজের খোঁজে অন্যত্র ছুটতে হচ্ছে। অনেকেরই অভিযোগ, বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানা, জলপাইগুড়ির শিল্পায়ন নিয়ে কোনও শাসক দলই তেমন ‘সিরিয়াস’ নয়।
জেলা শিল্প কেন্দ্র সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলায় এই মুহুর্তে পাঁচ-ছ’টি বড় শিল্প রয়েছে৷ কিন্তু শেষ বহু বছরে জেলায় কোনও বড় শিল্প হয়নি৷ রানিনগর শিল্প তালুকে অনেকে জমি নিলেও, বছরের পর বছর ধরে তা ফেলে রেখে দিয়েছেন৷ আমবাড়ি ফালাকাটা শিল্প তালুক উদ্বোধন হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সেখানে শিল্প গড়তে কেউ জমি নেননি৷ আবার জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি সড়কের দুই ধারে শিল্প গড়ার জন্য অনেকে জমি কিনলেও তা ফাঁকা পড়ে রয়েছে৷
সার্ধ শতবর্ষের মুখে জলপাইগুড়ি জেলার শিল্পের হতশ্রী নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহলও। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম সম্ভাবনাময় জেলা হল জলপাইগুড়ি। দিনের পর দিন বঞ্চনার কারণে সেই জেলার শিল্প সে ভাবে গড়ে ওঠেনি। এখনও সময় আছে। চা, পর্যটন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানতে হবে।’’
বস্তুত, এক সময় জলপাইগুড়ির আর্থিক ভিতটাই দাঁড়িয়েছিল চা শিল্পের ওপর৷ ১৯৬৮ সালের বন্যার পর একের পর এক চা বাগানের সদর দফতর জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় সরে যেতে শুরু করে৷ সেই সঙ্গে বদল হতে থাকে বাগানের মালিকানাও৷ আর তার একটা বড় প্রভাব পড়ে জলপাইগুড়ির অর্থনীতির উপর৷
জলপাইগুড়ির নর্থবেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক পুরজিৎ বক্সিগুপ্ত বলেন, ‘‘এখন শুধু চা বাগানের উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না৷ অন্য শিল্প স্থাপনেরও সময় এসে গিয়েছে৷ যেমন এই জেলায় কৃষিজ শিল্প থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিরাট সম্ভবনা রয়েছে৷ কিন্তু কাজ যে খুব একটা ভাল ভাবে এগোচ্ছে, তা বলা যাবে না৷’’
জলপাইগুড়ি জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘শিল্প তালুকে যারা জমি দখল করে রেখে দিয়েছেন তাদের ব্যাপারেও প্রশাসনের উদ্যোগ দেখা যায় না৷’’
এত সবের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। তা হল, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে জলপাইগুড়িই৷ তাদের হিসাবে জেলায় এই মুহুর্তে এ ধরণের প্রায় চার হাজার শিল্প রয়েছে৷ কিন্তু ওই দফতরেরই কর্তাদের কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, এই চারহাজার ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের একটা বড় অংশই গড়ে উঠেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায়৷ জেলার বাকি অংশে এ ধরণের শিল্প খুব বেশি নেই৷ জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার চন্দন পাল বলেন, ‘‘আমবাড়ি ফালাকাটা শিল্প তালুকে শিল্প গড়তে অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেছেন৷ শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকা ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলার অন্যান্য প্রান্তেও ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়তে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে৷’’
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়িকে ভীষণ ভালবাসেন। সে জন্যই এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় পর্যটন প্রকল্প জলপাইগুড়ির গজলডোবার ভোরের আলোয় হচ্ছে। চা বাগানের জন্য ডিরেক্টরেট হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy