E-Paper

মনুষ্যত্ব জেগে থাকুক চিরকাল, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব থাকুক অমলিন

মনুষ্যত্ব হল মানুষের শাশ্বত স্বভাব। মায়া-মমতা, ভালবাসা, দয়া, পরোপকারিতা, সহানুভূতি, সমানুভূতি এবং এরকম আরও অনেক কিছু! এগুলিই তো মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে।

মনিমা মজুমদার (স্কুল শিক্ষিকা, কোচবিহার)

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এক জন মানুষ একটা ফ্ল্যাটে মরে পড়ে রইলেন প্রায় সাত-আট মাস। এতগুলি দিন তাঁর অনুপস্থিতিতে কেউ টের পাননি, তাঁকে কেউ খোঁজেওনি! পুলিশ ফ্ল্যাট ফাঁকা করতে গিয়ে সেই মৃতদেহের খোঁজ পায়! অন্যদিকে কী অবলীলায় এক জন মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে মারা হচ্ছে। কারও হাত কাঁপছে না! আমাদের দেখতে হচ্ছে সাত বছরের শিশুকন্যার ধর্ষিত মৃতদেহ। আমরা দেখছি, বয়স্ক বাবা-মাকে নির্দ্বিধায় বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে সক্ষম সন্তান!

এই ঘটনাগুলি রোজই আমাদের সামনে আসছে। সোশাল মিডিয়া তোলপাড় করে দিচ্ছে। আবার থিতিয়ে যাচ্ছেও কয়েকদিনের মধ্যেই! আবার নতুন কোনও বিষয়— কয়েকদিনের আলোচনা! মানুষ খুব সহজেই ভুলে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতম ঘটনাগুলি! মনুষ্যত্ব হারানোর এই অস্থির সময় যেন ক্রমশই গিলে নিচ্ছে সবাইকে।

মনুষ্যত্ব হল মানুষের শাশ্বত স্বভাব। মায়া-মমতা, ভালবাসা, দয়া, পরোপকারিতা, সহানুভূতি, সমানুভূতি এবং এরকম আরও অনেক কিছু! এগুলিই তো মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে। এর মধ্যেই মানুষের চিরাচরিত গুণ ধরা রয়েছে এবং মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলে হিংসা, ঘৃণা, নির্যাতন, ধর্ষণ করার প্রবণতা এগুলি কী? আসলে এইসব তাড়নাকে মনুষ্যত্বই নিয়ন্ত্রণ করে। মন ও মনের কর্যকলাপকে ঠিক ভাবে পরিচালনা করতে শেখায়। সেই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মানুষ কি ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে? অন্যায়, অপরাধ, অসামাজিক হিংস্র প্রবৃত্তিকে মনুষ্যত্ব দমিয়ে রাখতে পারছে না?

ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই থেকে জেনে এসেছি যে, মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব! বুদ্ধির দ্বারা মানুষ নিজেকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা প্রমাণ করেছে। মানুষের মধ্যে যে মনুষ্যত্ব থাকে, তাকে তো লালন করার কথা মানুষের। কিন্তু তা কি হারিয়ে যাচ্ছে কেবলই? কোথায় সেই ইতিবাচক অভ্যাস? লোভ এবং মোহ খুব তাড়াতাড়ি কি গ্রাস করে নিচ্ছে মানবিকতাকে? নিজের খুব ছোট্ট একটি সুবিধের জন্য অন্য এক জনের খুব বড় ক্ষতি করতেও তাই মানুষ আজ পিছুপা নয়!

তবে অন্য ছবিও আলোর মতো চোখে পড়ে। রাস্তায় পড়ে থাকা অচেনা, অচেতন মানুষকে কেউ না-কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন! রক্ত দেওয়ার প্রয়োজনে অনেক দূর থেকে ছুটে আসছেন সহৃদয় কোনও মানুষ! বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে গিয়ে কেউ খাওয়াচ্ছেন রাস্তার কুকুর, বেড়ালকে! এইসব দৃশ্য চোখকে আরাম দেয়! মনকে বিশ্বাস ও ভরসা জোগায়। মনুষ্যত্ব এখনও শেষ হয়ে যায়নি। বুঝতে পারি যে, এখনও আমরা বেঁচে আছি! তবে দোটানা তো রয়েইছে। কবি বড়ু চণ্ডীদাস তো কবেই বলে গিয়েছেন— ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।’ মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার লড়াইয়ে আগামী দিনেও জিতবে তো? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

North Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy