Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
hen

ঘর মুরগির, সেখানে থাকে বাছুর

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বোয়ালমারির নতুন বস্তিতে শিবানী বৈদ্যের বাড়িতে মুরগির ঘর হয়েছে। বছর দেড়েক আগে তৈরি ঘরে পাঠকাঠির স্তূপ।

অনিয়ম: মুরগির ঘর রয়েছে। কিন্তু মুরগি নেই এঁর ঘরে।

অনিয়ম: মুরগির ঘর রয়েছে। কিন্তু মুরগি নেই এঁর ঘরে। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৭
Share: Save:

লক্ষ্য ছিল, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা মুরগি পুষে আয় করবেন। তাই দেড় বছর আগে মুরগি রাখার ঘর তৈরি হয়েছে। সে ঘরে আজ পর্যন্ত মুরগির ছানা ঢোকেনি, ঢুকেছে বাছুর থেকে পাটকাঠি। কোনও বাড়িতে তা আবর্জনা রাখার জায়গা।

কিন্তু মুরগির ছানা গেল কোথায়? গোষ্ঠীর মহিলারা উত্তর দিচ্ছেন, “ঘর তৈরি করে দিয়েছে শুধু। মুরগি দেয়নি।”

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া বোয়ালমারির নতুন বস্তিতে শিবানী বৈদ্যের বাড়িতে মুরগির ঘর হয়েছে। বছর দেড়েক আগে তৈরি ঘরে পাঠকাঠির স্তূপ। শিবানী বলেন, “দেড় বছর আগে মুরগি দেবে বলা হয়েছিল। একটা মুরগির ছানাও দেওয়া হয়নি। এখন এই ঘরটা নিয়েই আমাদের সমস্যা।” ওই এলাকারই আরেকটি গোষ্ঠীর সদস্য শম্পা ঘোষের বাড়ির উঠোনের পিছন দিকে মুরগির ঘরে বাছুর থাকে। শম্পার শাশুড়ি আশা ঘোষ বললেন, “মুরগি তো আর পেলাম না, তাই বাছুরটাকে রাখি।”

জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে প্রায় ১৬০০ মুরগির ঘর তৈরি হয়েছে। সরকারি হিসাব, বলছে তার মধ্যে মাত্র ৪৪৮টি ঘরে মুরগি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি ১১৫২টি ঘর বছর দেড়েক ধরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এমনই একটি মুরগির ঘর বুধবার একশো দিনের কাজ দেখতে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের চোখে পড়ে। মুরগি থাকার ঘরে বাছুর দেখে তাঁরা অবাক। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এক-একটি ঘর তৈরি করা হয়েছে প্রায় আশি হাজার টাকায়। সদর ব্লকে ঘর তৈরির জন্য মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। গ্রামের মহিলাদের জন্য একশো দিনের প্রকল্পে এই বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করা হল ঠিকই, কিন্তু তার সুফল অধিকাংশই পেলেন না। প্রশ্ন উঠেছে, কেন?

জেলা প্রশাসনের একশো দিনের কাজের সেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, মুরগির ছানা সরবরাহ করবে প্রাণী সম্পদ দফতর। জেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের উপ অধিকর্তা সৌমেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর পর্যন্ত একশো দিনের প্রকল্পে মুরগির ছানা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা ব্যক্তি উপভোক্তাদের মুরগির ছানা দিচ্ছি। তেমনিই নির্দেশ এসেছে। এই পর্ব শেষ হলে যদি নির্দেশ আসে, তার পরে একশো দিনের কাজে ফের মুরগির ছানা দেওয়া হবে।”

তা হলে প্রাণী সম্পদ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় না করে সাত তাড়াতাড়ি মুরগির ঘর তৈরি করা হল? এর মধ্যেই অনেকে ঘর ভাঙতে শুরু করেছেন বলেও দাবি। ফলে বেশিরভাগ টাকাই অপচয়, দাবি জেলা আধিকারিকদেরই একাংশের। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, “কেন্দ্রীয় দল চলে গেলে পর্যালোচনায় বসা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hen cow Self help group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE