Advertisement
E-Paper

চিকিৎসক হয়ে মায়ের কাছে ফেরা হল না, নিউ টাউনে ছাত্রের ‘খুনি’দের ফাঁসির দাবি পরিবারের

নিটের প্রস্তুতির জন্য মালদহ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন সাজিদ। মহিষবাথান বক্স ব্রিজ এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। শুক্রবার ভোরে ভাড়াবাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৯
photo of newtown murder case

নিহত ছাত্র সাজিদ হোসেন (বাঁ দিকে)। তাঁর মা সামিনা হোসেন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

ক’দিন আগেই মায়ের কোলে শুয়ে গল্প করছিলেন মালদহের বৈষ্ণবনগরের সাজিদ হোসেন। মেধাবী ছাত্র হিসাবে এলাকায় সুনাম রয়েছে তাঁর। ডাক্তারি প্রবেশিকা (নিট)-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাজিদ। সেই কারণেই নিউ টাউনে থাকতেন তিনি। তাড়াতাড়ি পরীক্ষায় পাশ করে বাড়ি ফিরবেন— মাকে এমনটাই জানিয়েছিলেন ১৯ বছরের সাজিদ। কিন্তু ঘরে আর ফেরা হল না সাজিদের। শুক্রবার ভোরে নিউ টাউন এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে খাটের তলায় স্যুটকেসের ভিতর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মিলল সাজিদের দেহ। মুখে লাগানো ছিল সেলোটেপ। সাজিদকে অপহরণের পর খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুত্রের এ হেন পরিণতিতে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন সাজিদের মা সামিনা খাতুন। থেকে থেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। পুত্রশোকে কাতর সামিনার একটাই দাবি, সাজিদের ‘খুনি’দের যেন ফাঁসি হয়।

নিটের প্রস্তুতির জন্য মালদহ থেকে কলকাতায় এসেছিলেন সাজিদ। মহিষবাথান বক্স ব্রিজ এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। অভিযোগ, গত ৪ অক্টোবর দুপুর ৩টের পর থেকে ওই পড়ুয়ার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভাড়াবাড়ির বন্ধুরাই সাজিদের পরিবারকে খবর দেন। তার পরই সাজিদের পরিবার নিউ টাউনে আসে। পর দিন নিউ টাউন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করে পরিবার। শুক্রবার ভোরে সাজিদের দেহ উদ্ধার করে নিউ টাউন থানার পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, সাজিদকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে দুষ্কৃতীরা ফোন করে বলেও দাবি করেছে সাজিদের পরিবার। সেই টাকা না দেওয়াতেই খুন বলে অভিযোগ সাজিদের বাবার।

এই ঘটনায় গৌতম এবং পাপ্পু সিংহ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেরায় খুনের কথা গৌতম স্বীকার করেছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। পুলিশের দাবি, জেরায় গৌতম জানিয়েছেন, মদ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে প্রথমে খুন করা হয়। তার পর মুখে সেলোটেপ লাগানো হয়। মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই খুন করা হয় বলে অনুমান পুলিশের। গৌতমের রেস্তরাঁ রয়েছে। তিনটি ঘর ভাড়া করে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতেন তিনি। আটক করা হয়েছে দুই বান্ধবী-সহ আরও চার জনকে।

সাজিদ আর নেই— শুক্রবার এই খবর পেতেই বৈষ্ণবনগর থানার ১৬ মাইল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাজিদের মা সামিনা। শোকে কাতর পরিবারের বাকি সদস্যরাও। পরিবার সূত্রে খবর, গত ২৮ অগস্ট মায়ের কোলে শুয়ে গল্প করছিলেন সাজিদ। সে বার মাকে তিনি জানিয়েছিলেন যে, পরীক্ষায় পাশ করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল অঘটন।

গত আট মাস আগে নিটের প্রস্তুতির জন্য নিউ টাউনে গিয়েছিলেন সাজিদ। ছোট থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন সাজিদ। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না সাজিদের।

সাজিদের এই পরিণতিতে আতঙ্কে ওই এলাকার অনেক পড়ুয়ার বাবা-মা। তাঁদের সন্তানরাও উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে থাকেন। সাজিদের এক আত্মীয়ার কথায়, ‘‘আমার মেয়ে দমদমে পড়াশোনা করছে। ডব্লিউবিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সবের পর কী করে ছেলেমেয়েদের বাইরে পাঠাব! কারও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। আমরা শাস্তি চাই। অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই।’’

Death Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy