দিনহাটায় মৃতের বাড়িতে শোকে ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা।
ফের টাকা তুলতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ানোর ধকল সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর অভিযোগ উঠল দিনহাটায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত ধনেশ্বর বর্মন (৫৫) উত্তর কামতা গ্রামের বাসিন্দা। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, দিনকয়েক আগেও টাকা তোলার জন্য ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা তুলতে পারেননি। তাই সোমবার ভোর তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে লাইনে দাঁড়ান। প্রায় দশ ঘন্টা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে এতটা সময় লাইনে দাঁড়ানোর ধকল সহ্য করতে না পেরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে।”
মৃত ধনেশ্বর বর্মন। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ধনেশ্বরবাবুর বড় ছেলে প্রদীপ সিভিক ভলান্টিয়ার। ছোট ছেলে সুজিত ছোট ব্যবসা করেন। ধনেশ্বরবাবু নিজের পানের দোকান ছিল। টানাটানির সংসার। নোট বাতিলের পর থেকেই পান বিক্রির রোজগারও কমে গিয়েছিল। এতদিনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় বিপাকে পড়ে যান তাঁরা। বাধ্য হয়ে কয়েকদিন আগে ব্যাঙ্কে জমানো কিছু টাকা তোলার জন্য লাইন দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়েও টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় তুলতে পারেননি। সেজন্যই নিরুপায় ধনেশ্বরবাবু শীতের ভোরে লাইনে দাঁড়ান। এ দিন দুপুরে ব্যাঙ্কের লাইনে অপেক্ষমান স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী আরতি দেবী। তার আগেই অবশ্য অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আরতিদেবী বলেন, “টাকা নিয়ে সমস্যা না হলে এত ভোরে উনি লাইনে যেতেন না। হয়ত তাহলে এভাবে ওঁর মৃত্যুও হত না।”
ঘটনার কথা জেনে হাসপাতালে যান দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, “ এ নিয়ে দিনহাটাতেই নোট বাতিলের জেরে দু’জনের মৃত্যু হল। এটাই আচ্ছে দিনের নমুনা।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিল রঞ্জন দে অবশ্য বলেন,“যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু বিজেপি বিরোধী ব্যাঙ্ককর্মীদের একাংশ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকদের নোট দিচ্ছেন না। তার জেরেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” নভেম্বরে দিনহাটার সাতকুড়ার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, নোট বাতিলের জেরে তিনদিন ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়ানোর জেরে অসুস্থ হয়ে ধরণীবাবু মারা যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy