E-Paper

সঙ্কটে শিক্ষক, ভাবনা স্কুলেও

শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের এক শিক্ষিকা এবং অন্য স্কুলে কর্মরত তাঁর স্বামী দু’জনেরই চাকরি বাতিল হচ্ছে।

সৌমিত্র কুন্ডু, অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০০
যোগ্য ও বৈধ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরী বাতিলে দায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল ও সুভাষ পল্লীর হাতি মোড়ে

যোগ্য ও বৈধ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরী বাতিলে দায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল ও সুভাষ পল্লীর হাতি মোড়ে অবস্থান বিক্ষোভ নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির। ছবি: বিনোদ দাস

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নিয়োগ মামলায় চাকরি বাতিলের তালিকায় শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের সাত জন শিক্ষক রয়েছে। শিলিগুড়ির নীলনলিনী হাই স্কুলের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে ১১ জনও। ওই স্কুলগুলির শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখছেন। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের খবর পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষা মহল।

শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের এক শিক্ষিকা এবং অন্য স্কুলে কর্মরত তাঁর স্বামী দু’জনেরই চাকরি বাতিল হচ্ছে। বাড়িতে তাঁদের ক্যানসার রোগী পরিজন রয়েছেন। জলপাইগুড়িতে চাকরি পেয়ে বিয়ে করেছিলেন এক শিক্ষক। তাঁর স্ত্রীও শিক্ষিকা। দু’জনেই একই নিয়োগ প্যানেলের। জলপাইগুড়ি জেলায় তাঁরা কর্মরত। আদালতের রায়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই চাকরি গিয়েছে। এ দিনের রায়ের পরে জলপাইগুড়ির শহরের একটি স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে রসায়নের কোনও শিক্ষক থাকছেন না।

শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলায় প্রায় পৌনে তিনশো এবং জলপাইগুড়ি জেলায় প্রায় চারশোর মতো শিক্ষক চাকরি হারাতে চলেছেন। শিক্ষাকর্মীর ক্ষেত্রে শিলিগুড়িতে অন্তত ৫০ জনের চাকরি যাচ্ছে। জলপাইগুড়িতে ষাট জনের বেশি।

এ দিন বিকেলে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ’র তরফে শিলিগুড়িতে যোগ্যদের চাকরিতে বহালের দাবিতে মিছিল করা হয়। মিছিল করে সুভাষপল্লি হাতিমোড়ে গিয়ে বিক্ষোভ, পথসভা হয়। সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি শহরেও এবিটিএ রাজ্য সরকারকে ধিক্কার জানিয়ে মিছিল করে।

শিলিগুড়়িতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিদ্যুৎ রাজগুরু বলেন, ‘‘এ দিন আমাদের রাজ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে কালো দিন। রাজ্য সরকারের অপদার্থতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফল। আমরা যোগ্য বৈধ শিক্ষকদের পক্ষে ছিলাম। তাঁদের জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম।’’ এসএসসি কাণ্ডের দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে বলে দাবি করে জলপাইগুড়িতে মিছিল করে বিজেপি।

জলপাইগুড়িতে যে শিক্ষক দম্পতির চাকরি বাতিল হল তাঁদের কথায়, “কত পরিশ্রম করে চাকরি পেয়েছি। কে অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন তাঁরা জানেন, তাঁদের শাস্তি হোক। আদালত কী এক বারও আমাদের কথা ভাবল না!”

জলপাইগুড়ির ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউশনের রসায়নের শিক্ষিকা তনুশ্রী সূত্রধর বলেন, “আমি পিএইচডি করেছি। সব যোগ্যতা রয়েছে। আমি আপার প্রাইমারি পরীক্ষা থেকে শিক্ষক নিয়োগের সব পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছিলাম। প্যানেলের উপরের দিকে ছিলাম। শুধুমাত্র হাইস্কুলে শিক্ষকতা করব বলে এই চাকর নিয়েছি। আজকে আদালতের নির্দেশে আমিও তো শাস্তি পেলাম, আমি কেন শাস্তি পাচ্ছি সেটা কে বলবে?”

বিভিন্ন জেলা স্কুল পরিদর্শকদের মধ্যে উভয় মতই রয়েছে। অনেকের মত, যে ভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল সে ক্ষেত্রে কড়া বার্তা গেল। কিছু শিক্ষক, শিক্ষিকা যোগ্য হলেও তাঁদেরও ফল ভুগতে হচ্ছে। শিলিগুড়িতে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে কেউ কিছু বলতে চাননি। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি অঞ্জন দাস বলেন, ‘‘পুরো রায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নেতৃত্বের নির্দেশ পেলে বিস্তারিত জানাব।’’ বিজেপি এবং তাদের যুব সংগঠন এর পিছনে রাজ্য সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দায়ী বলে সরব হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Siliguri Jalpaiguri SSC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy