বুধবার রাত তখন প্রায় ১টা। হঠাৎই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় শিলিগুড়ির এনজেপি থানার পাঁচকেলিগুড়ি এলাকার বাসিন্দাদের। বেরিয়ে তাঁরা দেখতে পান, স্থানীয় ব্যবসায়ী অভিনন্দন সাহা রক্তাক্ত অবস্থায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে। বা়ড়িতে ঢুকতে গেলে দেখা যায়, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তখন কয়েক জন অনেক চেষ্টায় বাইরে দিয়েই সেই বারান্দায় পৌঁছন।
বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকে পড়শিরা দেখেন, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন অভিনন্দনের স্ত্রী রীতা (৩০) এবং মেয়ে পায়েল (১০)। পায়েল তখনও নড়াচড়া করছিল বলে পরে কয়েক জন জানিয়েছেন। রীতা-অভিনন্দনের ছেলে, সাত বছরের অসিতকে পাওয়া যায় খাটে, ঘুমন্ত অবস্থায়। ডাক্তার এসে রীতা এবং পায়েল, দু’জনকেই মৃত বলে জানান। অভিনন্দনকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে।
মধ্যরাতের এই জোড়া খুন ঘিরে শিলিগুড়ি এখন সরগরম। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দুই দুষ্কৃতী টাকা লুঠের জন্য ঘরে ঢোকে। অভিনন্দনদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। স্ত্রী, মেয়ে ও অভিনন্দনকে তারা এলোপাথাড়ি কোপায় বলে অভিযোগ। শেষে অভিনন্দন কোনওক্রমে ব্যালকনিতে আসেন। তবে প্রতিবেশীরা জানান, তারও আগে অভিনন্দনের মেয়ের চিৎকারও শুনতে পেয়েছিলেন কেউ কেউ।
তবে ঘটনাটি ঘিরে এর মধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, ডাকাতিই যদি প্রধান উদ্দেশ্য হয়, তা হলে ঘরের থেকে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং সোনার গয়নায় দুষ্কৃতীরা কেন হাত দেয়নি? দ্বিতীয়ত, খুনের ধারালো অস্ত্রটি করিডরে পড়ে ছিল। সেটাই বা কেন ফেলে গেল দুষ্কৃতীরা? তৃতীয়ত, অসিতের গায়ে হাত দেয়নি দুষ্কৃতীরা। তা হলে পায়েলকে কেন খুন করা হল? চতুর্থত অভিনন্দনের ভূমিকাই বা ঠিক কী ছিল?
সন্দেহের অবকাশ আছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারাই। অভিনন্দন ও তাঁর স্ত্রীয়ের মধ্যে সম্প্রতি সম্পর্ক ভাল ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীদের কেউ কেউ। ছেলেমেয়েকে নিয়ে রীতা আলাদা ঘরে থাকতেন।
মুদি ও স্টেশনারি জিনিসপত্রের বড় পাইকার অভিনন্দনবাবুর কর্মীরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় বাড়ি ফেরেন তিনি। সব দরজা বন্ধ করে উপরে উঠে যান। পরে ভিতর থেকেই সেই দরজা খোলা হয়। তা হলে ডাকাতরা ঢুকল কোথা দিয়ে, তা এখন খোঁজ করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে তারা কুকুর নিয়ে তদন্ত চালায়। নার্সিংহোমে গিয়ে দু’দফায় অভিনন্দনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কথা বলা হয় ছোট্ট অসিতের সঙ্গে। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার গৌরব লাল বলেন, ‘‘কলকাতার ফিংঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy