Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন বাঁধ তৈরির কাজ শুরু তোর্সায়

কয়েক বছর আগেও গ্রাম থেকে তোর্সা নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। গতিপথ বদলে পাড় ভেঙে এগোতে থাকা সেই তোর্সাই এখন মেরে কেটে ১৫ ফুট দূর দিয়ে বইছে। গ্রামের কিছু এলাকার বসতবাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব বিক্ষিপ্ত ভাবে আরও কমেছে। ফলে এ বার বর্ষায় নদী ফুঁসে উঠলে গোটা গ্রামের অস্তিত্ব নিয়েই আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।

তোর্সায় বাঁধের কাজ চলছে।—নিজস্ব চিত্র।

তোর্সায় বাঁধের কাজ চলছে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

কয়েক বছর আগেও গ্রাম থেকে তোর্সা নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় এক কিলোমিটার। গতিপথ বদলে পাড় ভেঙে এগোতে থাকা সেই তোর্সাই এখন মেরে কেটে ১৫ ফুট দূর দিয়ে বইছে। গ্রামের কিছু এলাকার বসতবাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব বিক্ষিপ্ত ভাবে আরও কমেছে। ফলে এ বার বর্ষায় নদী ফুঁসে উঠলে গোটা গ্রামের অস্তিত্ব নিয়েই আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা।

নদী ভাঙনে এমনই বিপন্ন হয়ে পড়া কোচবিহার শহর লাগোয়া টাকাগছ-রাজারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের কাড়িশাল গ্রামে রবিবার নতুন বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হল। রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ওই কাজের সূচনা করেন। ওই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কাজ আটকে ‘তোলাবাজি’র প্রবণতার অভিযোগ উঠলে তিনি কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার পরেও অবশ্য এলাকার বাসিন্দাদের উদ্বেগ কমছে না। এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ষার মরসুম শুরুর দু’মাসও বাকি নেই। ইতিমধ্যেই মাঝেমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাজ শুরু হলেও বর্ষার আগে পুরো সম্পূর্ণ হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আগে কাজ শুরু হলে এমন উদ্বেগ থাকত না।

কাড়িশাল তোর্সা পাড়ে আয়োজিত ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আগে যা হওয়ার হয়েছে। নতুন করে যাতে এলাকার এক ইঞ্চি জমিও নদীর্গভে বিলীন না হয়, সে জন্য বর্ষার আগে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর থেকে টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের সহযোগিতাও দরকার।” ওই প্রসঙ্গের সূত্র ধরেই রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ক্লাব, পঞ্চায়েত কিংবা পার্টির নাম করে কাজ আটকে কেউ টাকা চাইলে আমাকে জানান। প্রয়োজনে নিজে থানায় অভিযোগ জানাব।” কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “বর্ষা শুরুর আগেই বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছি। কাজের ব্যাপারে সমস্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” কোচবিহার ২ ব্লকের বিডিও মোনালিসা মাইতি, টাকাগছ-রাজারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মালঞ্চ দাস প্রমুখ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের কাড়িশাল বুথ কমিটির নেতা মফিউদ্দিন মিঞা বলেন, “গ্রামে কোনও কাজে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠেনি। এ বারেও উঠবে না। রানিবাগান থেকে কাড়িশাল সীমানার ওই বাঁধ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। কাজ হলে বসতবাড়ি, জমি, মাজার শরিফ বাঁচবে।”

এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোচবিহার শহর লাগোয়া কাড়িশাল গ্রামে তিন হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। গত কয়েক বছর ধরে তোর্সা গতিপথ পাল্টে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসায় ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন। পাঁচশো বিঘার বেশি আবাদি জমিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এ বার বাঁধ না হলে গোটা গ্রামের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে নানা মহলে দরবার করা হয়। শেষ পর্যন্ত এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকায় ১ কিলোমিটার ৭০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরির কাজের সূচনা হয়। কাড়িশালের বাসিন্দা মজিদুল আলি বলেন, “আমার চার বিঘা জমি গত বছর তোর্সায় তলিয়ে গিয়েছে। চাষাবাদ ছেড়ে তাই দিনমজুরি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। সেই বাঁধ হচ্ছে। আগের বার হলে আমার মতো অনেককে এ ভাবে জমিজিরেত খোয়াতে হতো না। এখন বসত বাড়িটুকু রক্ষা হবে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তা হচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দা নুরবান বেগম, হামিদা বিবিরা বলেন, “নদী থেকে বাড়ির দূরত্ব ১০ মিটারে দাঁড়িয়েছে। কাজ শুরু হলেও বর্ষার আগে সম্পূর্ণ না হলে বাড়ি থাকবে না। সেটাই ভীষণ ভাবাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE