Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
বর্ষবরণে লাগামহীন শব্দদানব
fire crackers

রাতে বাজির দাপট, প্রশ্ন এল কীভাবে

বর্ষবরণে নিয়ন্ত্রণের কোনও চিহ্ন বোধা গেল না।

হাতেনাতে: ভবানীগঞ্জ বাজারে শব্দবাজি আটক পুলিশের। কোচবিহার। নিজস্ব চিত্র।

হাতেনাতে: ভবানীগঞ্জ বাজারে শব্দবাজি আটক পুলিশের। কোচবিহার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৪৪
Share: Save:

কোচবিহার সবে তখন সন্ধে হয়েছে। একটি-দু’টি করে বাজি ফাটতে শুরু করে। ঘড়ির কাটা যত ১২ টার দিকে এগিয়েছে, তারপর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাজির আওয়াজ।বৃহস্পতিবার, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ঠিক এমন ভাবেই শব্দদানবের তাণ্ডব চলল কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ারের একাধিক এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আতসবাজি ও শব্দবাজি পাল্লা দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। তাতে একদিকে যেমন সাধারণ নাগরিকের কান ঝালাপালা হয়েছে, তেমনই বাতাসে বেড়েছে দূষণের মাত্রা। সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল রাতভর ডিজে ও মাইকের আওয়াজ। এমন অবস্থা দেখে ছুটতে শুরু করে পুলিশ। বাজারে হানা দিয়ে বেশ কিছু শব্দবাজি আটক করে পুলিশ। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার বলেন, “অভিযোগ পা ওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” এমনটা জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের পুলিশ কর্তারাও।

পরিবেশপ্রেমীরা অবশ্য অভিযোগ তুলেছেন, কালীপুজো বা দুর্গাপুজোর মতো প্রচার বর্ষবরণে চোখে পড়েনি। তবুও বর্যবরণের রাতে আনন্দ, আবেগ প্রকাশে কোনও ‘কার্পণ্য’ ছিল না একদল মানুষের। আগেও বার বার চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, যে কোনও বাজি করোনা আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকারক। তার পরেও কেন প্রশাসন কঠোর হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “কালীপুজো বা দুর্গাপুজোয় এ বারে শব্দবাজি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্ষবরণে নিয়ন্ত্রণের কোনও চিহ্ন বোধা গেল না। এই সময় তেমন ভাবে কেউ প্রচারও হয়নি। আর সব আইন দিয়ে তো হয় না। সাধারণ মানুষকে আরও মানবিক হতে হবে।”

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার আগে থেকেই কোচবিহার শহর ও লাগোয়া এলাকা, দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জ, তুফানগঞ্জ থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ার শহর, ফালাকাটা, বীরপাড়া, কুমারগ্রাম, জয়গাঁ পর্যন্ত শব্দবাজির দাপটে নাজেহাল হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। দেদার শব্দবাজি ফেটেছে আলিপুরদুয়ার শহরে এবং সংলগ্ন এলাকায়। শব্দবাজির সঙ্গে সমানতালে চলেছে পাড়ায় পাড়ায় ডিজে বাজিয়ে পিকনিকের আয়োজন।

এই শব্দতাণ্ডবে বয়স্কদের বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলিপুরদুয়ারের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে নানা আয়োজন হতেই পারে। কিন্তু শব্দবাজি এবং আতসবাজির ধোঁয়া বাতাসের পক্ষে ক্ষতিকর। কোথাও কোথাও রাত দুটো পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। কত মানুষের কত অসুবিধে হল। কেউ কি বুঝবেন না?”

শামুকতলার বাসিন্দা মানিক দে বলেন, ‘‘রাত আড়াইটা পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে। চড়া স্বরে বেজেছে ডিজেও।’’

পরিবেশপ্রেমী জীবনকৃষ্ণ রায় জানান, ‘‘আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হল সরকারি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে। নতুন বছর শুরুই হল নিয়ম ভাঙা দিয়ে। যথেচ্ছ শব্দবাজি ফেটেছে জেলা জুড়ে। সঙ্গে ডিজের তাণ্ডব। এটা কি ঠিক হল? বিশেষ করে একদিকে সুন্দর পৃথিবীর জন্য আমরা প্রার্থনা করব, অপরদিকে নিজেরাই খারাপ অবস্থা তৈরি করব তা হয় না। বছরের শুরুটা এ ভাবে না হলেই ভাল হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fire crackers new year
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE