রাসমেলার ময়দান ফাঁকা। দোকানপাট নেই। স্টল তৈরির ব্যস্ততা নেই। কারণ করোনা-আবহে হচ্ছে না রাসমেলা। তবে মদনমোহন মন্দির সেজেছে অন্য বারের মতোই। রাসচক্র, পুতুলঘর, পুতনা রাক্ষসীর মূর্তি— সবই রয়েছে। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় রাতের মন্দির চত্বরে অন্য পরিবেশ। সেখানেই শনিবার রাতে আলতাপ মিঁয়ার তৈরি রাসচক্র ঘুরিয়ে রাস উৎসবের সূচনা করলেন দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান। রাতে উৎসবের সূচনার আগে বিশেষ পুজোও দেন তিনি। উৎসবের ওই আনন্দের মধ্যে আক্ষেপ একটাই, রাসমেলার আয়োজন না হওয়ায়।
স্থানীয় প্রবীণেরা জানান, ‘রাজনগর’ কোচবিহারে রাসমেলার আয়োজন না হওয়া এ বারই প্রথম নয়। ১৯২৩ সালে কলেরার প্রকোপ ছড়ানোয় রাজ-প্রশাসনের নির্দেশে রাসমেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল। সময়ের প্রবাহে তোর্সায় গড়িয়েছে অনেক জল। বেড়েছে মেলার কলেবর। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গোটা বিশ্বে ত্রাস তৈরি করেছে। তাই বন্ধ মেলা। তবে এত বছরের ধারাবাহিকতা বলে কথা! অনেকের মুখে তাই আক্ষেপের কথা ঘুরছে।
যাঁর তৈরি রাসচক্র ঘুরিয়ে শনিবার রাতে রাস উৎসবের সূচনা হল, সেই আলতাপ মিঁয়া বলেন, “সবাই সুস্থ থাকলে আনন্দ কিন্তু পরের বছর আরও বেশি করে করা যাবে।” ইতিহাস গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “১৯২৩ সালে কলেরার জন্য রাসমেলা হয়নি। এ বার করোনার জন্য রাসমেলা হল না। কিছুটা মনখারাপ হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তই হয়েছে।”
এক সময় কোচবিহারে রাসমেলার আয়োজন করত টাউন কমিটি। পরে সেই দায়িত্ব বর্তায় পুরসভার উপরে। কোচবিহার পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন ভূষণ সিংহ বলেন, “রাসমেলায় দেশের নানা এলাকা তো বটেই বিদেশের ব্যবসায়ীরাও আসতেন। প্রচুর লোকের সমাগম হতো। তাতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকত। তাই রাসমেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে আমাদেরও খারাপ লাগছে। তবে পরিস্থিতি সবাই মেনে নিয়েছেন।”
প্রশাসনিক ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাসমেলা না হলেও এ বার ছোট করে এমজেএন স্টেডিয়ামে শিল্পমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সামগ্রী বিক্রির স্টলই মূলত সেখানে থাকবে। শুক্রবার ময়দান ঘুরে দেখে জেলাশাসক জানিয়ে দেন, বড় করে রাসমেলা যে ভাবে হত সেটা এ বার হচ্ছে না। ভূষণ জানান, ৪ ডিসেম্বর শিল্পমেলা শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়েক জন বাসিন্দার কথায়, ‘‘পরিস্থিতিআমরাও বুঝছি। তবে রাসমেলা মানে তো শীতের রাজনগরে টমটম গাড়ির আওয়াজ, গরম জিলিপিও। অন্য যে কোনও মেলায় তো আর তা সে ভাবে মেলেনা। এতেও মন খারাপ হয়।’’