শহর থেকে ‘হারিয়ে’ যাচ্ছে ছোট, মাঝারি খেলার মাঠ। পাড়ার, রাজপথের ধারে সেই সব মাঠ চোখের সামনে ‘দখল’ হচ্ছে। সংরক্ষণে নজর নেই কারও। ক্রীড়াপ্রেমীদের অভিযোগ, একাধিক মালিকানাহীন মাঠে রাতারাতি নতুন নথি তৈরি করে তড়িঘড়ি কোনও প্রভাবশালী সংস্থার নির্মাণ হয়েছে। প্রতিবাদ জানালেও পদক্ষেপ করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি শহরে খেলার জন্য পড়ে রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি মাঠ। কিন্তু সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার আশ্বাস, শহরের খেলার মাঠ নিয়ে সংস্থার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও মাঠ সংরক্ষণ বা যত্ন নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগের তির জেলা ক্রীড়া সংস্থার দিকেই। মাঠের অভাবে এক দিকে যেমন ছোটদের খেলার সমস্যা হচ্ছে, তেমনই নতুন খেলোয়াড় খুঁজে পেতেও সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাঠ দখলে পরিবেশে প্রভাবও রয়েছে।
মাঠ নিয়ে সমস্যায় খোদ জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থাই। সংস্থার নিজস্ব কোনও মাঠ নেই। বড় কয়েকটি ক্লাবের মাঠ রয়েছে। সে সবের উপরে নির্ভর করেই ক্রীড়া সংস্থাকে চলতে হয়। তা সে ১৮৯৮ সালে স্থাপিত টাউন ক্লাবের মাঠ হোক বা ১৯১৭ সালে স্থাপিত জেওয়াইএমএ ক্লাবের মাঠ। জলপাইগুড়ির নবাব মুশারফ হোসেনের দান করা জমিতে জেওয়াইএমএ ক্লাবের খেলার মাঠ তৈরি হয়। ১৯৪৪ সালে তৈরি হয় এফইউসি ক্লাবের মাঠ। এই মাঠগুলিই জেলা ক্রীড়া সংস্থার ‘সম্বল’। যদিও এই মাঠগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে সে সব মাঠে পাড়ার খেলা হয় না। পাড়ার বা মাঝারি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাঠ খুঁজে পাওয়াই জলপাইগুড়ি শহরে এখন কঠিন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি, রেলের খেলার মাঠে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। শহরের বেশ কিছু মাঠে দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক সদস্যের কথায়, “খেলার মাঠ রক্ষা করতে সুষ্ঠু নীতি লাগবে, তা-ই তো নেই। কোথাও মাঠ দখল হচ্ছে দেখেও কিছু করা সম্ভব হয় না।” অভিযোগ, মালিকানাহীন বা সরকারি বলে পরিচিত খেলার মাঠেও বেসরকারি নির্মাণ হয়েছে জলপাইগুড়িতে। শহরের উত্তরপ্রান্তের একটি বড় মাঠ লাগোয়া বাসিন্দারা সেটিকে ‘খাস জমি’ বলেই জানতেন। সেখানে নিয়মিত খেলাও হত। হঠাৎ শহরের একটি প্রভাবশালী সংস্থা সেখানে নির্মাণ শুরু করে। বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলেও কোনও ফল হয়নি বলে দাবি।
এলাকার শাসক দলের এক নেতা বলেন, “আমাদের দেখানো হল, সব কাগজ ঠিক রয়েছে। কিন্তু আরও ভাল করে খতিয়ে দেখলে ভাল হত। মাঠটা প্রোমোটিংয়ে না দিলে এলাকার ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গা হারিয়ে যেত না।”
জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ভোলা মণ্ডল বলেন, “মাঠের অভাবে খেলোয়াড় তৈরি হতে পারছে না। পাড়ায় পাড়ায় তো মাঠই নেই। রাজ্যের মধ্যে জলপাইগুড়ি একমাত্র জেলা যেখানকার জেলা ক্রীড়া সংস্থারও কোনও মাঠ নেই।“
জলপাইগুড়ির পুরপ্রধান পাপিয়া পাল বলেন, “শহরের বেশ কিছু উদ্যান এবং খেলার মাঠ পুরসভা থেকে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ নিয়ে সর্বস্তরের বাসিন্দাদের সচেতনতা প্রয়োজন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)