Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ধান বিক্রি করতে একটি কাউন্টারে ঠায় ১২ দিন

সব কৃষকেরই এক অভিযোগ, বুনিয়াদপুরের কিসানমান্ডিতে মাত্র একটা কাউন্টার থাকায় ধান বিক্রি করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগছে। এই সুযোগে ফড়েরা বাইরে থেকে কম দামে ধান কিনে ভুয়ো প্রমাণপত্র দেখিয়ে ধান বিক্রি করছে।

স্তূপ: বুনিয়াদপুরের কিসান  মান্ডিতে চলছে ধান কেনাবেচা। নিজস্ব চিত্র

স্তূপ: বুনিয়াদপুরের কিসান মান্ডিতে চলছে ধান কেনাবেচা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৬
Share: Save:

বুনিয়াদপুরের মিরাকুরির বাসিন্দা রজব আলি ১০ দিন থেকে ঘুরছেন ধান বিক্রি করতে। আজও বিক্রির তারিখ (‘ডেট’) পাননি। সফিউদ্দিন, তাইজুদ্দিনরা বেশ কয়েক দিন ঘোরার পরে অবশেষে কিছুটা ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। সব কৃষকেরই এক অভিযোগ, বুনিয়াদপুরের কিসানমান্ডিতে মাত্র একটা কাউন্টার থাকায় ধান বিক্রি করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগছে। এই সুযোগে ফড়েরা বাইরে থেকে কম দামে ধান কিনে ভুয়ো প্রমাণপত্র দেখিয়ে ধান বিক্রি করছে।

রজব আলি, তাইজুদ্দিন আহমেদ, অনিল সিংহ, অরুণ ঘোষেদের দাবি, ‘‘গোটা ব্লকে একটাই মান্ডি। তার উপরে মান্ডির একটা কাউন্টার থেকেই ধান কেনা হচ্ছে। এ দিকে, ধান বিক্রির জন্য লাইন দিয়ে রেখেছেন প্রায় দু’হাজার কৃষক। তাই ১০ থেকে ১২ দিন পরে পরে এক একজনের তারিখ পড়ছে। দূরদূরান্ত থেকে এসে হয়রান হতে হচ্ছে আমাদের।’’

যদিও গঙ্গারামপুর মহকুমা খাদ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শঙ্খজিৎ কবিরাজের বক্তব্য, ‘‘কৃষকদের ১০ দিন ঘুরতে হচ্ছে না। নাম নথিভুক্ত করার পরে আমরাই এক থেকে দু’দিনের মধ্যে ফোন করে ডেকে নিচ্ছি। দু’টি কাউন্টার খোলা হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু একটা কাউন্টার থেকে সুষ্ঠু ভাবেই ধান কেনা হচ্ছে। তেমন কোনও সমস্যা নেই।’’

কৃষকরা জানান, এই সময়ে ধান বিক্রির টাকা থেকেই তাঁরা শীতকালীন চাষের খরচ তুলতে পারেন, সংসারও চলে ওই টাকায়। ফলে এই টাকা তাঁদের জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিসানমান্ডিতে ধান বিক্রি করতে এত দিন সময় লাগে বলে অনেকে খোলা বাজারে কম দামেই কুইন্টাল প্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাশাপাশি, মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি কুইন্টালে পাঁচ কেজি ‘ধলতা’ দিতে হয়। এই পাঁচ কেজি ধানের দাম প্রায় ৯০ টাকা, ফলে সহায়ক মূল্য ১৭৫০ টাকা হলেও আখেরে কৃষক পান ১৬০০ টাকার কিছু বেশি। ফলে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা ভেঙে ভুটভুটি ভাড়া করে ধান বিক্রি করতে এসে হাতে যা লাভ থাকছে, তাতে তাঁদের পরতায় পোষাচ্ছে না বলে অনেকেরই দাবি।

এই সব কারণে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কৃষকদের দাবি, প্রতিটি অঞ্চলে অঞ্চলে ক্যাম্প করে ধান কেনার ব্যবস্থা করা হলে কৃষকদের এই হয়রানির শিকার হতে হত না। কিসানমান্ডিতে ভিড় অনেকটাই কমে যেত। কৃষকরা উপকৃত হতেন। প্রশাসনিক পরিকল্পনার অভাবেই তাঁদের তেমন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বরং এই সমস্যার কারণে ফড়ে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। গ্রাম থেকে কম দামে ধান কিনে ভুয়ো পরিচয়পত্র জোগাড় করে কিসানমান্ডিতে বিক্রি করছে। এর জেরে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত কৃষক। যদিও এমন অভিযোগ মানতে চায়নি খাদ্য দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kisan Mandi Buniadpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE