Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus

আলু-ভাতেও তাপ

পেশায় কৃষক নীরেন। এ বার বিঘা তিনেক জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। ধান ভালই হয়েছিল। কিন্তু অসময়ের বন্যায় সেই ধান এখন জলের তলায়।

অ-প্রস্তুত: কী আছে ভবিষ্যতে, চিন্তায় ডুবে গ্রামের মেয়েরাও। বংশীহারির কানুর গ্রামে। ছবি: অমিত মোহান্ত

অ-প্রস্তুত: কী আছে ভবিষ্যতে, চিন্তায় ডুবে গ্রামের মেয়েরাও। বংশীহারির কানুর গ্রামে। ছবি: অমিত মোহান্ত

নীহার বিশ্বাস
বুনিয়াদপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০২:২৮
Share: Save:

বট গাছের নীচে ছোট্ট কালীমন্দির। তার সামনে পাকা বেদিতে বসে জনা পাঁচেক ছেলে-বুড়ো। আশ্বিনের দুপুরে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। দু'সপ্তাহ পরেই দুর্গা পুজো। বংশীহারি ব্লকের কানুর গ্রামে আশ্বিনের রোদে দীর্ঘ ছায়া ফেলতে শুরু করেছে গাছ। কিন্তু পুজোর ছায়া সে ভাবে কোই? মন্দিরের বেদিতে বসে নীরেন সরকার, সামসুদ্দিন মিয়াঁদের মধ্যে ভেসে উঠছিল সেই সব শব্দই: করোনা, পুজো, বন্যা।


পেশায় কৃষক নীরেন। এ বার বিঘা তিনেক জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন। ধান ভালই হয়েছিল। কিন্তু অসময়ের বন্যায় সেই ধান এখন জলের তলায়। "অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এমনিতেই করোনার জন্য কোনও কাজ হয়নি। তাই রোজগার নেই। ভেবেছিলাম ধান বেচে সংসার চলবে। ছেলেমেয়ের পুজোয় নতুন জামা দেব। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে দুই বেলার খাবার জোটানোই দায়। আনাজের দাম আকাশ ছোঁয়া, জমির ধান জলের তলায়। খাব কী?’’ এক নিশ্বাসে বলে গেলেন নীরেন।

নীরেনের কথার খেই ধরেই পাশের গ্রাম কুমারসইয়ের বাসিন্দা সামসুদ্দিন মিয়াঁ, যিনি চাষের পাশাপাশি গ্রামেই একটা ছোট্ট দোকান চালান, বললেন, ‘‘করোনার জন্য একদম বিক্রি নেই। অনেক বাকি পড়েছে। এ বার ফসলের অবস্থা ভাল না। টাকা কী ভাবে দেবে? আমার ব্যবসাও তাই হচ্ছে না। এ বছর সত্যিই আকালের বছর।’’

শুধু কানুর নয়, বংশীহারি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরলেই এমন ছবি নজরে পড়ছে। গ্রামের কৃষকরা ফসল বিক্রি করেই দিন চালান। কিন্তু বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তাঁরা। তার উপরে জিনিসপত্রের লাগামছাড়া দামে নাজেহাল গ্রামের নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। পাশের মাগুরমারি গ্রামের বাসিন্দা পরেশ রায় গ্রামে গ্রামে মণিহারি জিনিসপত্র ফেরি করেন। পরেশ বলেন, ‘‘আলু সেদ্ধ ভাত যে খাব, সেই আলু কিনতেই তো টাকা শেষ। একটা কাঁচা লঙ্কা ডলে ভাত খাওয়াই এখন দামি হয়ে গিয়েছে।’’ আলুর দাম ৪০ টাকা কেজি, কাঁচা লঙ্কার দাম ২০০ টাকা কেজি। ‘‘সামান্য যা বিক্রিবাট্টা হচ্ছে, তাতে আলু সেদ্ধ ভাত জোটানোই মুশকিল। বাচ্চাদের পুজোয় কী দেব?’’ বলছেন তিনি।

করোনার অতিমারিতে গত ছ’মাস এমনিতেই রোজগার ছিল না এদের। সেই ধাক্কা কাটতে না কাটতেই বন্যায় ডুবেছে জমির ফসল। তার সঙ্গে নিত্য পণ্য, আনাজ, তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় চরম সঙ্কটে গ্রামের বাসিন্দারা। তাই দু'সপ্তাহ পরে পুজো হলেও এখনও জেলার গ্রামীণ এলাকায় পুজো নিয়ে কোনও উন্মাদনা নেই। কী ভাবে একটু আলুসেদ্ধ ভাত জোটানো যাবে, সেই চিন্তায় পুজোর আনন্দ ঘুচে গিয়েছে এদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandemic Coronavirus North Bengal Peoples
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE