Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

লড়াই করে বাড়ির স্বপ্ন দেখেন সুভদ্রা

অসুবিধে সত্ত্বেও কাজ শিখতে দমে যাননি সুভদ্রা। তিনি বললেন, ‘‘হাত না থাকার কারণে নিজের অনেক কাজ আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কিন্তু পা দিয়ে যা করা সম্ভব সেগুলো করব না কেন। সবসময়ে অন্যের সাহায্য নিতে পারব না।’’

লড়াকু: বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৮
Share: Save:

বয়স ত্রিশ ছুঁয়েছে। কিন্তু এখনও উচ্চতা ফুট তিনেকের বেশি বাড়েনি। জন্ম থেকে দু’হাত নেই। দু’টো পা দুর্বল হওয়ায় ছোট্ট শরীরের ভার বেশিক্ষণ বইতে পারে না। চুল বেঁধে দিতে হয়, পোশাক পরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু আর কোনও সাহায্য লাগে না সুভদ্রা নন্দীর।

কাউকে কপালে হাত দিতে দেন না। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলে টিপ ধরে দুই ভ্রুর মাধ্যখানে বসিয়ে দেওয়া শিখেছেন। মুখে ক্রিমও মাখেন দু’পায়ের আঙুল দিয়ে। এই সেদিন পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হত, এখন পায়ের আঙুলে চামচ ধরে ভাত মুখে তোলেন সুভদ্রা। পা দিয়েই বিছানা পাতেন। ঘর সাফ করতেও সাহায্য নেন না কারও। একদিকে মাথা বেঁকিয়ে কাঁধের সঙ্গে ঝাড়ু চেপে ধরে ঘর ঝাড় দেন।

চার ভাই, দুই বোনের পরে জন্ম। সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের দু’হাত নেই, পা দু’টিও সরু। জন্মের পরে পাড়ার লোকজন নিজে থেকেই বিড়ি শ্রমিক কানাই নন্দী এবং তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী দেবীর এই মেয়ের নাম দিয়ে দিয়েছিল সুভদ্রা। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে আরেক মেয়ের বাড়িতে এসে উঠেছেন মা লক্ষ্মী দেবী। জলপাইগুড়ির বামনপাড়ায় দিদি এবং ভাগ্নের সংসারে থাকেন জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বড় হওয়া সুভদ্রা।

অসুবিধে সত্ত্বেও কাজ শিখতে দমে যাননি সুভদ্রা। তিনি বললেন, ‘‘হাত না থাকার কারণে নিজের অনেক কাজ আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। কিন্তু পা দিয়ে যা করা সম্ভব সেগুলো করব না কেন। সবসময়ে অন্যের সাহায্য নিতে পারব না।’’ ছোটবেলায় পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন সুভদ্রা।

এই মাসেই প্রতিবন্ধী দিবসের মিছিলে স্কুটিতে চেপে ছিলেন আগাগোড়া। সঙ্গে নানা প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে গিয়েছিলেন ঝোলায়। সেগুলো বিক্রিও করেছেন। সরাসরি পণ্য বিক্রি করে এমন একটি সংস্থার এজেন্সি নিয়েছেন তিনি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে সেগুলো বিক্রি করেন। বেশি দূর হাঁটতে পারেন না। আর কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সুপুরি কাটেন। সেদ্ধ সুপুরি দুই পা দিয়ে ধরে ধারালো বটিতে চাপ দিয়ে দু’ফালা করে দেন। খোলা ছেড়ে বেরনো সুপুরি পা দিয়ে ছুড়ে দেন ঝুড়িতে। এক ঝুড়ি সুপুরির জন্য পারিশ্রমিক মাত্র দশ টাকা। সুভদ্রা বললেন, “সেটুকুই বা কে দেয়। অন্যের ভরসায় বসে থাকতে পারি না। আমার খাই-খরচ আমি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।” নিজের বাড়ির স্বপ্ন দেখেন তিনি। সাধ রয়েছে একটি দোকান করারও। সেই স্বপ্ন নিয়েই লড়ে যান সুভদ্রা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Physically Challenged Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE