কুচলিবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ব্যাপারে ঢাক-ঢোল পিটিয়েই চলে সরকারি প্রচার। কিন্তু তার পরেও বাড়িতে প্রসবের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা গিয়েছি কি? গত কয়েক মাসে মেখলিগঞ্জ ব্লকের কয়েকটি ঘটনা জানান দিচ্ছে— না।
মেখলিগঞ্জ ব্লকে বাড়িতে প্রসবের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার সিংহভাগই ঘটেছে কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস। এই এলাকায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আছে। অভিযোগ, সেখানে নিয়মিত পরিষেবা মেলে না। স্থায়ী চিকিৎসক নেই। নেই অন্তর্বিভাগ। সপ্তাহে কয়েক দিন দু’ঘণ্টার জন্য বহির্বিভাগের পরিষেবা মেলে।
আর এই সব কারণেই এলাকার মানুষের ভরসা ২০ কিলোমিটার দূরের মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতাল। কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রাম এতটাই প্রত্যন্ত এলাকায় যে, ওই সব এলাকার লোকজনকে মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হয়। সেই কারণে প্রসবের ক্ষেত্রে তো বটেই, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
সম্প্রতি মেখলিগঞ্জ ব্লকের পর্যালোচনা বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে দেখা গিয়েছে গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেখলিগঞ্জ ব্লকে বাড়িতে প্রসবের ঘটনা ঘটেছে ১৮টি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই ১৮টির মধ্যে ১১টি ঘটনাই ঘটেছে কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বাকি ৭টির মধ্যে ৩টি ১৬৫ উছলপুকুড়ি এলাকায়, ২টি নিজতরফে এবং ১টি ঘটনা ১৮৩ শোলমারির। এর থেকে পরিষ্কার যে, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারে মেখলিগঞ্জ ব্লকে এখনও পর্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে কুচলিবাড়ি এলাকা।
এই গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন দিেক বাংলাদেশ। তিস্তা নদীর চরে থাকা ২৫ পয়েস্তির রায়পাড়া, সিংহপাড়া,ফকতের চর ও হুসেনের চর এলাকার থেকে প্রসূতিদের হাসপাতালে আনতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় বাড়ির লোকজনকে। তিস্তার বাঁধ থেকে নদী পথে রায়পাড়া, সিংহ পাড়া, হুসেনের চর ও ফকতের চরের দূরত্ব সাড়ে তিন থেকে চার কিলোমিটার।
এই পথে চর এলাকা যেমন হেঁটে পার হতে হয় তেমনি দু’বার নৌকায় ওঠারও প্রয়োজন হয়। তাছাড়া নিশ্চয়যান চর এলাকায় যেতে পারে না। সেই কারণে নিশ্চয়যান বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকে। চর এলাকায় কাঁধে করে ও নদীতে নৌকায় করে এনে প্রসূতিকে নিশ্চয়যানে তোলা হয়। এর পরে ২০ কিলোমিটার দূরের মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অথচ হুসেনের চর ও ফকতের চর থেকে একটা নদী পেরোলেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া যায় অনায়াসে। তা হলে কি ঝক্কি এড়াতে ও কম রাস্তার কারণে এ দেশের প্রসূতিরা কোনও ভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy