Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের মৃত্যু, সেনায় নাতিকে পাঠালেন বৃদ্ধ

কালচিনি থানার অধীন ভাটপাড়া চা বাগান এলাকায় থাকেন কার্জি লামা। ওই বাগানেই এক সময় শ্রমিকের কাজ করতেন ৬৪ বছরের এই বৃদ্ধ। তাঁর চার ছেলে।

নজরদার: চ্যাংরাবান্ধার স্থলবন্দরে চলেছে পারাপার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

নজরদার: চ্যাংরাবান্ধার স্থলবন্দরে চলেছে পারাপার। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

পার্থ চক্রবর্তী
কালচিনি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:০০
Share: Save:

পাকিস্তানের দিক থেকে ধেয়ে আসা শত্রুদের গুলিতে নিজের ছেলের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু তাতে কী? পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে নাতিদেরও সেনাবাহিনীতে পাঠাতে চান কালচিনির অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক কার্জি লামা। তাঁর এক নাতি ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন৷

কালচিনি থানার অধীন ভাটপাড়া চা বাগান এলাকায় থাকেন কার্জি লামা। ওই বাগানেই এক সময় শ্রমিকের কাজ করতেন ৬৪ বছরের এই বৃদ্ধ। তাঁর চার ছেলে। চা বাগানে দিনভর কাজ করে যখনই সময় পেতেন, তখনই ছেলেদের দেশপ্রেম নিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। যারই ফলেই হয়তো ১৯৯৩ সালে ২০ বছর বয়সে সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর মেজো ছেলে অজয় লামা। এর ঠিক এক বছর পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তাঁর সেজো ছেলে সঞ্জয়ও।

২০০৭ সালে কাশ্মীরের রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলার মাঝে ক্রান্তিতে অজয়ের ডিউটি ছিল। সেই সময়ে এক দিন সীমান্তের ও-পার থেকে শত্রুপক্ষের গুলি ছুটে আসে। মৃত্যু হয় ৩৪ বছরের অজয়ের। বীরপাড়ায় তাঁর বাড়ি তখনও অর্ধসমাপ্ত। পরবর্তীতে অজয়ের স্ত্রী তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেখানে চলে যান।

এখনও জঙ্গি হানায় কোনও জওয়ান নিহত হওয়ার খবর এলে পুরনো শোক নেমে আসে ভাটপাড়ার এই লামা পরিবারে। তাঁদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে পুলওয়ামার ঘটনা। যদিও তাতে ৬৪ বছরের বৃদ্ধ কার্জি লামাকে নিজের লক্ষ্য থেকে কেউ টলাতে পারেনি। বাড়ির এক কোণে একটি ঘরের বাইরে বসে বৃদ্ধ বললেন, ‘‘মরতে তো এক দিন সবাইকেই হবে। কিন্তু সহজ মৃত্যুর চেয়ে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া যে কত গর্বের, সেটা আমি ছাড়া হয়তো কেউ বুঝবেন না।” এখনও ছেলের নিহত হওয়ার অভিশপ্ত দিনটিকে ভুলতে পারেন না কার্জি। তার পরও তিনি চান, তাঁর নাতিরাও সেনায় নাম লেখাক। বৃদ্ধের কথায়, “পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। সে জন্য আমার বাড়ির প্রত্যেক ছেলেরই সেনাবাহিনীতে যাওয়াটা জরুরি।”

কার্জির সেজো ছেলে সঞ্জয় বেশ কিছু দিন আগেই সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে সঞ্জয়ের ছেলে এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর প্রশিক্ষণ চলছে। পুলওয়ামার প্রসঙ্গে সঞ্জয় বলেন, “মাঝেমধ্যে মনে হয়, অবসর নিয়েছি তো কী। আরও একবার সেনাবাহিনীতে গিয়ে পাকিস্তানকে জবাব দিয়ে আসি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE