বন্ধ বাগানের সামনে। বুধবার। — নারায়ণ দে
প্রশাসনের তরফে একশো দিনের কাজ না পাওয়ায় অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিলেন কালচিনি ও রায়মাটাং কর্তৃপক্ষ। যদিও, শ্রমিকদের দাবি ওই বাগানে একশো দিনের কাজ চলছে। কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
বুধবার সকালে ওই দুই বাগানের শ্রমিকরা কাজে গিয়ে জানতে পারেন মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও শ্রমিকরা কোনও রকম আন্দোলন করেননি। উল্টে নিয়মিত কাজ করছিলেন। উৎপাদন ও ভালোই হচ্ছিল দু’টি বাগানেই। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজ এলাকার উন্নয়নের জন্য। তার জন্য কর্তৃপক্ষ বাগান ছাড়বেন কেন? বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’’ চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন ডিবিআইটিএর পক্ষে সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘বিষয়টি চাবাগানের মালিক পক্ষ ও প্রশাসনের বিষয়।’’
তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা তথা আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মার দাবি, ‘‘এই চা বাগানগুলিতে কোনও রকম শ্রমিক অসন্তোষ নেই। ১০০ দিনের কাজের অজুহাত দেখিয়ে মালিক পক্ষ চা বাগান ছাড়ায় সমস্যায় পড়লেন কয়েক হাজার শ্রমিক।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল চা বাগান দুটি। রুগ্ণ চা বাগান দুটি খোলার সময় জেলা প্রশাসনের তরফে এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ১০০ দিনের কাজ বরাদ্দ করার কথা হয়। সেই মতো শ্রমিক লাইনের উন্নয়ন, নালা পরিষ্কার, রাস্তা তৈরির মতো নানাবিধ কাজ পাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা বাবলু মজুমদার জানান, চা বাগান দুটিতে সরকারি রেশন ব্যবস্থা রয়েছে। ১০০ দিনের কাজও চলছিল। পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘দুটি বাগান মিলে প্রায় পনেরো লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। মালিক পক্ষ যে যুক্তি দেখিয়েছে তা ঠিক নয়।’’
শ্রমিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কালচিনি চা বাগানে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় তিন হাজার এবং রায়মাটাং বাগানে সাড়ে বারোশো। ডিসেম্বর মাস থেকে চা পাতা কমে আসে। এই সুখা মরশুম চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। তাই এমন সময়ে কর্তৃপক্ষ চা বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ায় সমস্যা বাড়বে। মঙ্গলবার কালচিনি চা বাগানে প্রায় সতেরোশো শ্রমিকের মজুরি প্রদান করেছেন কর্তৃপক্ষ। ৩০০ কর্মীর মজুরি বাকি। আগামী শনিবারে মজুরি দেওয়ার কথা ছিল।
ইউটিইউসির নেতা গণেশ লামা, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ বার্লারা বলছেন, ‘‘এমনিতেই নোট সমস্যা। তার উপর চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা কী করে সংসার চালাবে।’’ বাগানের শ্রমিক শনি ইন্দোয়ার, শুক্রা খাড়িয়ারা জানান, এর আগে চা বাগান বন্ধ ছিল প্রায় একটানা চার বছর। ফের বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে তাদের ভবিষ্যত। এ নিয়ে কালচিনি ব্লকে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা দাড়াল তিনটি। মধু চা বাগানটি গত দু’বছর ধরে বন্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy