ফুঁসছে দুর্যোগে ফুলে ওঠা নদী। স্রোত ঠেলে লাগোয়া বাঁশঝাড়ের দিকে এগোচ্ছেন এক জন। কারণ, জল থেকে বাঁচতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মা-ছেলে।
শনিবার গভীর রাতে গাঠিয়া ও জলঢাকা নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাসে তছনছ হয় জলপাইগুড়ির নাগরাকাটার বামনডাঙার মডেল ভিলেজ। প্রাণ বাঁচাতে বাঁশঝাড়ে ঝুলেছিলেন মা ও ছেলে। কিন্তু তা আর কতক্ষণ? সে চিন্তাতেই রবিবার সকাল হয়। মৃত্যুর প্রহর যেন এগিয়ে আসছে, এক রকম টের পাচ্ছিলেন মা জিতনি মানকি মুন্ডা এবং ছেলে জোসেফ মানকি মুন্ডা। সে সময়ে গ্রামেরই বাসিন্দা ধনি মাহালি সাঁতরে হাজির হন সেখানে। এর পরে দড়ি ধরে প্রবল জলস্রোতের মধ্যে বাঁশঝাড় পর্যন্ত আসেন কোনও মতে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মা এবং ছেলেকে পিঠে করে উদ্ধার করেন তিনি। এলাকার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে এই কাহিনি ঘুরছে স্থানীয়দের মুখে-মুখে।
জিতনি বলেন, ‘‘উনি না থাকলে, আমরা জীবন ফিরে পেতাম না।’’ আর ধনির কথায়, ‘‘মানবিকতার জন্যই কাজ করেছি। এর বেশি কিছু না।’’
এলাকার চা বাগানের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁরা অভাবনীয় ভাবে প্রাণে বেঁচেছেন। একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’ বামনডাঙা চা বাগানের যুবক লক্ষ্মীনারায়ণ শাউ বলেন, ‘‘ওই দিন রাতের জলস্রোতে তছনছ হয়ে গিয়েছিল আমাদের বাগান। সে দিন অনেকেই টিনের চালের উপর আশ্রয় নিয়ে প্রাণরক্ষা করেছিলেন। সেই মুহূর্তগুলোর আতঙ্ক কেউ ভুলতে পারছে না। প্রাণ বাঁচানোর এ রকম অনেক কাহিনি এখন উঠে আসছে। প্রাণরক্ষায় যাঁরা এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)