E-Paper

ভোট ‘বোঝার’ নেতা নেই, তাই হার: রিপোর্ট সঙ্ঘের

ঝাড়আলতা-১ এবং ২, মাগুরমারি-২, গাদং-১, বারোঘরিয়ার মতো রাজবংশী ভোট-প্রধান গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপি পিছিয়ে পড়েছে। বানারহাট-১ ব্লকের চা বাগান তথা আদিবাসী প্রধান এলাকায় এ বারের উপনির্বাচনে কম ভোট পড়েছে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রাজবংশী, আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং অসংরক্ষিত সব শ্রেণির ভোটদাতারাই ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছেন বলে রিপোর্ট খাস রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস)। হারের কারণ নিয়ে সঙ্ঘের তরফে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে বলে সূত্রের দাবি। সে রিপোর্ট বলছে, এক মাত্র মতুয়া ভোট ছাড়া, সমাজের সব অংশ থেকেই বিজেপি ভোট কমেছে। এই ভোট কমে যাওয়ার পিছনে সঙ্ঘের ব্যাখ্যা, ভোট পরিচালনা বা বোঝার মতো ‘পেশাদার কার্যকর্তা’ জেলা বিজেপিতে নেই। লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে, সঙ্ঘের এই ‘রিপোর্ট’ চিন্তায় রাখছে বিজেপিকে, দাবি দল সূত্রের।

গত বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতাদের অনেকেই ‘উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত’, ‘পৃথক রাজ্য চাই’ প্রভৃতি দাবি তুলেছিলেন। ধূপগুড়ি ভোটে প্রচারে আসা গ্রেটার নেতা অনন্ত রায়ও উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি তুলেছেন একাধিক বার। বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করেছিলেন, এই দাবি তুলে রাজবংশী ভোটের বড় অংশ পাওয়া যাবে। সঙ্ঘের রিপোর্ট বলছে, ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে বিজেপি রাজবংশী ভোটের মাত্র ১৮ শতাংশ পেয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, ‘বঙ্গভঙ্গের’ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তৃণমূল রাজবংশী ভোটও বাড়াতে পেরেছে বলে সঙ্ঘ মনে করছে।

ঝাড়আলতা-১ এবং ২, মাগুরমারি-২, গাদং-১, বারোঘরিয়ার মতো রাজবংশী ভোট-প্রধান গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপি পিছিয়ে পড়েছে। বানারহাট-১ ব্লকের চা বাগান তথা আদিবাসী প্রধান এলাকায় এ বারের উপনির্বাচনে কম ভোট পড়েছে। বিজেপির ভোট ২০২১ সালের থেকে কমেছে প্রায় চার হাজার। অন্য দিকে, কম ভোট পড়লেও আদিবাসী-প্রধান এই এলাকায় তৃণমূলের ২০২১ সালের নিজেদের ভোট ধরে রেখেও উপনির্বাচনে শ’তিনেক ভোট বাড়িয়েছে। সঙ্ঘের মতে, আদিবাসী ভোটের উপরে তৃণমূলের এই নিয়ন্ত্রণই তাদের ধূপগুড়ি-জয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েছে।

সঙ্ঘের রিপোর্টে সংখ্যালঘু-প্রধান ৪৬টি বুথে গত বিধানসভার থেকেও ভোট কমেছে বিজেপির। এই বুথগুলিতে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। যে ধূপগুড়ি পুরসভাকে ‘পাখির চোখ’ করেছিল তারা, সেখানেও ভোটে ধস নেমেছে। গত বিধানসভার থেকে প্রায় তিন হাজার ভোট কমেছে বিজেপির। সঙ্ঘের এক কার্যকর্তার কথায়, “তৃণমূল যে ভাবে সুষ্ঠু ভাবে ভোটের হিসেব কষেছে, ছোট-ছোট এলাকা বেছে জনসংযোগ করেছে, তেমন পরিকল্পনা করে রূপায়ণ করার লোক বিজেপিতে না থাকায় হার হয়েছে।”

জলপাইগুড়ির জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘‘কর্মীরা দাঁতে-দাঁত চেপে লড়াই করায় সামগ্রিক ভাবে মাত্র দুই শতাংশ ভোট কমেছে আমাদের।’’ তবে নেতৃত্ব নিয়ে সঙ্ঘের তোলা প্রশ্ন নিয়ে মন্তব্য করেননি তিনি। শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ কার্যত একা নিজের মতো প্রচার চালিয়েছিলেন ধূপগুড়িতে। সঙ্ঘের রিপোর্টে শঙ্করের প্রচার চালানো গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির জয়ের দাবি রয়েছে। শঙ্করের মন্তব্য, “বুথ স্তরে অভিজ্ঞ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে দল। তাতেই তৃণমূলের মতো দলের সঙ্গে আমরা ভাল ভাবে মোকাবিলা করতে পারব।” অন্য দিকে, তৃণমূলের হয়ে ধূপগুড়িতে ভোটের দায়িত্বে থাকা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, “আমরা বিজেপির মতো ভোটকে জাতপাতে ভাগ করি না, আমরা উন্নয়নের কথা বলি।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy