ছাত্র-যুবর বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপাল। সেই আবহেই নেপালে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়লেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জের ২৫ জন শ্রমিক। ভিডিয়োবার্তায় নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। জানিয়েছেন, দেশে ফিরে আসা তো দূরের কথা, ঘরের বাইরে বেরোনোর অনুমতিটুকুও নেই। পকেটে টাকা নেই, পর্যাপ্ত খাবারও অমিল। অগত্যা নেপালে নিজ নিজ কর্মস্থলেই আটকে রয়েছেন তুফানগঞ্জের নাটাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাটাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাপালমারা ও বসপাড়া গ্রামের প্রায় ২৫ জন যুবক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বহু বছর ধরে নেপালে কাজ করেন। প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও পুজোয় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তার আগেই ছাত্র-যুব বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপাল। এই মুহূর্তে নেপালের যা পরিস্থিতি, তাতে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের পরিবারের দাবি, নেপালে তাঁরা যে সব সংস্থায় কাজ করেন, সেখানে ঢুকে তাঁদের মারধর পর্যন্ত করা হচ্ছে। এই অবস্থায় শ্রমিকেরা ভিডিয়োবার্তায় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের যেন দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। একই দাবি অপেক্ষারত পরিজনদেরও। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে পরিবারের।
আরও পড়ুন:
এমনই এক গ্রামবাসী নিতাই দাস জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দু’মাস আগে নেপালে কাজে গিয়েছিলেন। এখন সেখানেই আটকে রয়েছেন তিনি। নিতাইয়ের দাবি, প্রতিবেশী দেশে তাঁর ছেলেকে মারধরও করা হচ্ছে। কী করে ছেলে বাড়ি ফিরবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারছেন না পরিজনেরা। নিতাই বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ করে ওদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’’ একই অবস্থা নাটাবাড়ির বাসিন্দা শঙ্কর ঘোষের। শঙ্কর জানান, তাঁর বাবা দীর্ঘ দিন ধরে নেপালে কাজ করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর। বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছে, তবে এই মুহূর্তে নেপালে চরম দুর্দশায় দিন কাটছে তাঁদের। বাবা-সহ বাকি শ্রমিকদের সকলকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন শঙ্কর।
প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন কেপি শর্মা ওলি। শুক্রবার নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সুশীলা কার্কী। তবে অশান্তি এখনও থামেনি ভারতের প্রতিবেশী দেশে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ভারত সরকার। সেখান থেকে ভারতীয়দের কী ভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তা-ও দেখা হচ্ছে।