একসঙ্গে শহর ও গ্রামীণ এলাকার দলের কয়েক হাজার ‘নতুন, পুরনো’ নেতানেত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং কর্মীদের নিয়ে পিকনিক করলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব৷ অনুষ্ঠানের নাম ‘চলো মিলি আনন্দে’। রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মেয়রের ব্যবস্থাপনায় বাগডোগরা লাগোয়া বেংডুবি ট্রিল্যান্ড পিকনিক স্পটে অনুষ্ঠানটি হয়।
বছরের শুরুতে এই পিকনিক ঘিরে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। অনেকেই বলছেন, আগামী বছর বিধানসভা ভোট। তার আগে জেলায় জেলায় দলের সাংগঠনিক রদবদল অপেক্ষা করছে। প্রার্থী এবং দলীয় নেতৃত্ব বদলের সম্ভাবনার মাঝে দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। বিশেষ করে, গত বিধানসভা এবং লোকসভায় পরপর দলের হারের পরে নতুন করে দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সেই সঙ্গে নবীন-প্রবীণ ‘বিভেদ’ সরিয়ে রেখে সবাইকে নিয়ে চলার বার্তাও দলে রয়েছে।
মেয়র অবশ্য বলছেন, ‘‘এতে রাজনীতি নেই। তৃণমূল পরিবারের সকলে মিলে একটা দিন কাটালাম। অনেকেই গান, কবিতা বললেন। নানা অনুষ্ঠান হয়েছে।’’ তিনি জানান, মোবাইলের যুগে মুখোমুখি দেখা কম হয়। সেখানে অনেকের সঙ্গে অনেকের দেখা হল। গ্রাম ও শহরের সবাই মিলে দিনটা কেটে গেল।
দলীয় সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে থেকেই মেয়রের তরফে মোবাইলে পিকনিকের মেসেজ বিভিন্ন নেতা-নেত্রী, কর্মীদের কাছে পৌঁছয়। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছিল। পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ড, মহকুমা পরিষদ এলাকা মিলিয়ে সবার আসার জন্য ৫৯টি বড় বাসের ব্যবস্থা করা হয়। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ৫০-৬০ করে পিকনিকে যান। এর বাইরে প্রচুর গাড়ি, মোটর বাইকেও অনেকে সেখানে যান। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, সমতলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ, সভাধিপতি অরুণ ঘোষ, কাউন্সিলর, জনপ্রতিনিধিরাও পিকনিকে যোগ দেন।
দলের নেতারা অনেকে মনে করছেন, গৌতম দেব শিলিগুড়িতে দলকে একজোট করে চলার বার্তা দিতেই এমন অনুষ্ঠান করেছেন। বিশেষ করে, কলকাতায় দলনেত্রীর বৈঠকের পরে জেলায় জেলায় বিভিন্ন নির্দেশ এসেছে। তবে নতুন ও পুরনো সক্রিয় নেতাকর্মীদের সামনে রেখে কাজ করা না গেলে ভোটের ফলাফল কী হবে তা অতীতে দেখা হয়েছে।
জেলার কয়েক জন নেতা জানান, সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রীর কলকাতার বৈঠকে শিলিগুড়ি থেকে কয়েক জন নেতাকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে দলের একাংশ অসন্তুষ্ট হয়। তাঁরা বিষয়টি কলকাতায় জানিয়েছেন। এলাকায় জননেতা নন, ভোট করাতে জানেন না, এমন লোকজনকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। অনুষ্ঠানে নিজস্বী তুলে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতেই তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন। এতে দলে ‘বিভেদের’ সৃষ্টি হয়। সেখানে এ ধরণের পিকনিক সবাইকে এক জায়গায় করার কাজ করেছে। সংগঠন চাঙ্গা হলে ভোটে ফল পড়বে।
এ দিন প্রায় চার হাজারের মতো লোক পিকনিকে জড়ো হন। সকলকে বাসে, গাড়িতে স্যান্ডুউচ, কলা, মিষ্টি, কচুরি ও জলের প্যাকেট দেওয়া হয়। গান-বাজনার অনুষ্ঠানের ফাঁকে চা, নরম পানীয়, চিকেন পকোরা দেওয়া হয়। পরে দুপুরে ডাল, ভাত, ভাজা, সবজি, মাছ-মাংস, চাটনি ও মিষ্টি সহযোগে খাবারের ব্যবস্থা ছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)