Advertisement
২২ মার্চ ২০২৩

ভাইয়ের হাতে রাখি পরাতে পারল না রাখি

রাখি এ দিন ভোরে মেঘুটোলায় পড়তে গিয়েছিল। সাড়ে নটা নাগাদ সহপাঠী গ্রামেরই ঋতু মণ্ডলের সাইকেলের পিছনে বসে বাড়ি ফিরছিল সে।

পোড়া: এই ট্রাক্টরের ধাক্কাতেই মারা যায় ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র

পোড়া: এই ট্রাক্টরের ধাক্কাতেই মারা যায় ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ১১:৩০
Share: Save:

ঠিক ছিল ছোট্ট ভাইয়ের হাতে এ বারই প্রথম রাখি বাঁধবে সে। নিজে বেছে রাখি কিনেও এনেছিল। কিন্তু রাখি বাঁধার ইচ্ছে আর পূরণ হল না রাখির। টিউশন নিয়ে ফেরার পথে ট্রাক্টরের ধাক্কায় তার মৃত্যুতে পূর্ণিমাতেই যেন আঁধার নেমেছে কালিয়াচক ২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলসিরামটোলায়।

Advertisement

ওই গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল পেশায় দিনমজুর। স্ত্রী লতিকাদেবী বাড়িতে বিড়ি বাঁধেন। তাঁদের দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে প্রেয়সী রাখি নামেই পরিচিত। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট মেয়ে প্রিয়াঙ্কা ও দু’বছরের ছেলে সায়নকে নিয়ে তাঁদের সংসার। ছোট্ট ভাইয়ের জন্য রবিবারই বাজার থেকে রাখি কিনে এনেছিল রাখি। ঠিক ছিল, সোমবার সকালে টিউশন নিয়ে ফিরে দু’বোন মিলে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধবে।

রাখি এ দিন ভোরে মেঘুটোলায় পড়তে গিয়েছিল। সাড়ে নটা নাগাদ সহপাঠী গ্রামেরই ঋতু মণ্ডলের সাইকেলের পিছনে বসে বাড়ি ফিরছিল সে। পাশে সাইকেলে ছিল আরেক সহপাঠী সোনালি মণ্ডলও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তুলসিরামটোলা কালীমন্দিরের কাছে একটি খালি ট্রাক্টর নিয়ে ইটভাটা থেকে ফিরছিল উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের হাসিবুল শেখ। অভিযোগ, ট্রাক্টর চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলছিল হাসিবুল। আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক্টরটি কিশোরীদের ধাক্কা মারে। সোনালির কিছু না হলেও ঋতু ও রাখি সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে। মাথা কার্যত থেতলে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বছর চোদ্দোর রাখির। ঋতুর সামান্য আঘাত লাগে।

দুর্ঘটনার পর ট্রাক্টর নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন চালক। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন তাঁকে তাড়া করে ধরে ফেলে। অভিযোগ, তারপরই শুরু হয় গণপ্রহার। ট্রাক্টরটিকে একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে তাতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে মোথাবাড়ি থানার পুলিশ গিয়ে হাসিবুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঙিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে পরে মালদহ মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পুলিশ বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ট্রাক্টরের আগুন নেভায়।

Advertisement

রাখির মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রামে। মা লতিকাদেবী বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাবা বিকাশবাবু বলেন, ‘‘বড় মেয়ের খুব শখ ছিল যে এ বার ভাইয়ের হাতে প্রথম রাখি বেঁধে দেবে। কাল রাখি কিনেও এনেছিল। কিন্তু আর কোনওদিন সে রাখি বাঁধতে পারবে না।’’ বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম চৌধুরীরর অভিযোগ, ‘‘এলাকায় বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টর চলে। দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.