ঘরে গলা ভর্তি জল। সংসারের জিনিসপত্র বাঁচাতে তার মধ্যেই ভাল জায়গার খোঁজ। মালদহে শুক্রবার। ছবি: জয়ন্ত সেন।
চরম বিপদসীমারও অন্তত এক মিটার উপর দিয়ে বইছে মহানন্দা। শুক্রবার দুপুর ১২টায় মহানন্দার জলস্তর বেড়ে হয় ২২.৭২ মিটার। সকাল থেকে মালদহের ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ শহরের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। মহানন্দা বাঁধ সংলগ্ন দুই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা এ দিন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বহু ঘরবাড়ি জলের তলায় চলে গিয়েছে। নদীর ঢালে থাকা বেশ কিছু কাঁচা বাড়ির টিনের চাল পর্যন্ত এখন জলের নীচে।
সব থেকে খারাপ অবস্থা ইংরেজবাজারের উত্তর ও দক্ষিণ বালুচরের। উত্তর বালুচরে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ দিন জল ঢুকে পড়ে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের উপরতলাতেই রয়েছে জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা হোম। নীচে জল ঢুকে পড়ায় হোমের আবাসিকরাও আতঙ্কিত। সব মিলিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, দুই শহরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ সহ অন্য ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে স্কুলেও জায়গা না পেয়ে রাস্তার ধারে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন। কিন্তু ত্রাণ বিলি নিয়ে দুই পুরসভা বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বানভাসিদের প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে।
বেলা ১০টায় গিয়ে দেখা গেল শহরের কামারপাড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা বাপিন ঘোষ গলা সমান জলে ডুবে ঘরের সিলিং ফ্যান খুলে বের করে নিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও কিছু বোঝার আগেই এ দিন ঘরে জল ঢুকে পড়ে। পরে তা গলা সমান হয়ে যায়। সামান্য কিছু আসবাব বের করতে পেরেছি। ১৯৯৮ সালের পরে এ বার এমন পরিস্থিতি হল।’’ উত্তর বালুচরের প্রদীপ সিংহ, মুকুন্দ চৌধুরীরাও ব্যস্ত ছিলেন এক কোমর জলে নেমে ঘরের আসবাবপত্র বের করতে। তাঁরা বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালের বন্যাতেও আমাদের ঘরে জল ওঠেনি। এ দিন সকাল থেকে আচমকা ঘরে জল ঢুকে যায়।’’ বেলা যত বাড়ছে জল বাড়ছে। কোনওরকমে পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছেছেন তাঁরা। বিকেল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ।
দুপুরে বন্যা কবলিত বালুচর এলাকায় যান পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘যথাসাধ্য ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। শহরের সমস্ত স্কুলগুলিতে বানভাসি মানুষদের রাখা হচ্ছে।’’ উত্তর বালুচরে স্থানীয় একটি ক্লাবের তরফে এলাকার প্রায় ৬০০ বানভাসিদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়।
ক্লাবের সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘‘দুপুর থেকে তাঁদের ডাল, ভাত, সবজি, মাছ ও পাপড় ভাজা দেওয়া হয়েছে। রাতেও দেওয়া হবে।’’ এ ছাড়া অন্য ক্লাব ও সংগঠনও এ দিন রান্না করা খাবার বিলি করেছে দুর্গতদের।
পুরাতন মালদহতেও ১, ২, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৮ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকাতে মহানন্দার জল উঠেছে। পুরপ্রধান কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আমরা দুর্গতদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিলির চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy