Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হরিয়ানাতে দুর্ঘটনায় মৃত ৬, শোকাহত দিনহাটার গ্রাম

কথা ছিল বুধবারই ওঁরা বাড়িতে ফিরবেন। তাই সবাই মিলে পিক আপ ভ্যানে চেপে রওনা হয়েছিলেন স্টেশনের দিকে। ট্রেন ধরতে। ট্রেন ধরা আর হয়নি ওঁদের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দিনহাটার দুই পরিবারের ৬ জনের। ভিনরাজ্য থেকে প্রথম সেই খবর পৌঁছয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

মৃতদের শোকার্ত পরিজনদের সঙ্গে বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র।

মৃতদের শোকার্ত পরিজনদের সঙ্গে বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

কথা ছিল বুধবারই ওঁরা বাড়িতে ফিরবেন। তাই সবাই মিলে পিক আপ ভ্যানে চেপে রওনা হয়েছিলেন স্টেশনের দিকে। ট্রেন ধরতে। ট্রেন ধরা আর হয়নি ওঁদের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দিনহাটার দুই পরিবারের ৬ জনের।
ভিনরাজ্য থেকে প্রথম সেই খবর পৌঁছয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি সোমবার রাতে ওই খবর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গ্রামে পাঠান। পৌঁছয় পুলিশও। মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনহাটার চাউলের কুঠি গ্রামে শুধু কান্নার রোল পড়ে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতদের নাম আনোয়ার হোসেন (৪৮), সুমী বিবি (৩০), সিরাজ হক (২), রিঙ্কু দাস (৩০), বনিতা দাস (৭), বিশাখা দাস (১২)। প্রথম দুজন স্বামী-স্ত্রী। তাঁদের সন্তান সিরাজ। রিঙ্কুদেবীর দুই মেয়ে বনিতা ও বিশাখা। ওই ঘটনায় আরও ১১ জন জখম হয়েছে। তাঁদের কাঠপুতলি ও জয়পুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃত ও জখমরা সকলেই দিনহাটার গোসানিমারি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাউলের কুঠি এলাকার বাসিন্দা।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুকে বিষয়টি জানান। ওই এলাকায় গিয়ে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। এ দিন সকালে রবীন্দ্রনাথবাবু ওই এলাকায় যান নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন। সে কথা পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছি। তাঁদের পাশে আমরা আছি।”

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “ওই এলাকার বহু মানুষ কাজের খোঁজে এখনও ভিনরাজ্যে থাকেন। ওই পরিবারগুলিও ইটভাটায় কাজ করত। সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরবে বলে পিকআপ ভ্যান করে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। সে সময় দুর্ঘটনা হয়। ছোট ছোট শিশুরাও মারা গিয়েছে। ওই ঘটনা শোনার পর থেকে খুব খারাপ লাগছে।” তিনি জানান, অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃতদেহগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্রামে। আজ, বুধবার ভোরে সেগুলি গ্রামে পৌঁছে যাবে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “কী ভাবে দুর্ঘটনা হল তা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে মৃতের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই এলাকা এবং আশেপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ কাজের খোঁজে রাজস্থান, হরিয়ানা সহ ভিনরাজ্যে থাকেন। মাঝে মধ্যে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসলেও ফের তাঁরা চলে যান। ওই দুটি পরিবারও দীর্ঘদিন থেকে হরিয়ানার মহেন্দ্রগঞ্জে একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। বছর খানেক আগে তাঁরা বাড়িতে ফিরেছিলেন। গত নভেম্বর মাসে ফের তাঁরা মহেন্দ্রগঞ্জে যান। ওই সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের জানিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা জুন মাসের শেষের দিকে বাড়িতে ফিরবেন। রবিবার রাতে মহেন্দ্রগঞ্জ থেকে পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে তাঁরা রাজস্থানের কাঠপুতলি থানা এলাকার স্টেশনের দিকে রওনা হন। রাজস্থানের দিল্লি-জয়পুর রোডের ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়ার সময় কাঠপুতলি এলাকায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই ৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই গাড়িতে থাকা আরও ১১ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাঠপুতলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ৫ জনকে জয়পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সোমবার ওই খবর পৌঁছে যায় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। রিঙ্কু দাসের আত্মীয় কাঁদতে কাঁদতে মণীন্দ্র দাস বলেন, “অনেক দিন পর আবার ওঁদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবেছিলাম। তা আর হল না। এমন ঘটনা ঘটেছে ভাবতেই পারছি না।” এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য কৃষ্ণকান্ত বলেন, “ওই পরিবার দুটি খুব গরিব। কাজ করে দু-পয়সা বেশি আয় করার জন্যেই বাইরে গিয়েছিল। এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারেননি কেউ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

haryana accident dinhata delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE