ফাইল চিত্র।
অনেক বছর আগের কথা। আমি তখন জয়ন্তী বন বাংলোর কেয়ারটেকার। সেই সময় সেখানে ‘আবার অরণ্যে’ ছবির শ্যুটিং করতে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তবে জয়ন্তীতে তিনি থাকেননি। ছিলেন আলিপুরদুয়ার শহরে। দিনে শুধুমাত্র শ্যুটিং করতে জয়ন্তীতে আসতেন। জয়ন্তীর ‘রিভার বেডে’ টানা তিন-চার দিন এই ছবির শ্যুটিং চলেছিল।
তবে সৌমিত্রবাবু একা নন। ‘আবার অরণ্যে’ ছবির শ্যুটিং করতে সেই সময় শর্মিলা ঠাকুর, তব্বু-সহ আরও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী জয়ন্তীতে এসেছিলেন। কিন্তু কেন জানি না, যে দিন শুনেছি এই শ্যুটিং হবে, সে দিন থেকেই সৌমিত্রবাবুকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়েছিল। বন দফতরের আধিকারিকরা আগেই জানিয়েছিলেন, জয়ন্তীতে শ্যুটিং করতে এসে আমাদের বাংলোতেই বিশ্রাম নেবেন সৌমিত্রবাবুরা। সে জন্য আগে থেকেই তাঁদের ঘর সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছিলাম।
প্রথম দিন যখন উনি জয়ন্তীতে এলেন, তখন মনের উচ্ছ্বাস কোনও রকমে আটকে রেখেছিলাম। এত বড় মাপের অভিনেতাকে কাছ থেকে দেখে হৃদয় জুড়িয়ে গিয়েছিল। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ওঁরা মূলত বিশ্রাম নিতেই আমাদের বাংলোয় আসতেন। সৌমিত্রবাবু এলেই দৌড়ে গিয়ে ঘর খুলে দিতাম। বাংলোর সামনে কখনও চেয়ারে বসে সেটের বাকিদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। তখন ওঁকে চেয়ার এগিয়ে দিতাম। জলের বোতল হাতে দিতাম। কিন্তু আপশোস, কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত পাইনি। সেই আপশোস অবশ্য বছর দুই পর কেটে যায়। যখন কোচবিহারে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর এক রাত্রি জয়ন্তীতে আমাদের বন বাংলোতে ছিলেন। সেই রাতে ওঁর জন্য বাটা মাছের ঝোল ও মাংস রান্না করেছিলাম। খেয়ে উনি আমায় বলেছিলেন, “রান্না খুব ভাল হয়েছে।” ওঁর মুখ থেকে এই কথা শুনে এত ভাল লেগেছিল, বলে বোঝাতে পারব না। উত্তরে নমস্কার জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘ধন্যবাদ’।
(বনরক্ষী, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy