কোচবিহারের জনগণের উপরে, বিশেষ করে রাজবংশীদের উপরে অনন্ত মহারাজের প্রভাবের কথা মানেন না তৃণমূলের জেলার এক শীর্ষ নেতা। তিনি নিজেও রাজবংশী। উল্টে তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে প্রার্থী হতে বলুন না। দেখুন কটা ভোট পান।’’
এতটা কঠিন শব্দে না হলেও তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতারও বক্তব্য, ভোটে দাঁড়িয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না অনন্তের মতো ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নেতারা। যুক্তির পক্ষে তিনি কোচবিহারের জনগোষ্ঠীর হিসেব দেন। দেখিয়ে দেন, সেখানে রাজবংশী থেকে অন্য জনগোষ্ঠীর লোকজন সংখ্যায় বেশি।
তবু কী ভাবে যেন অনন্তের প্রভাব থেকেই যায়। তাঁর বিরুদ্ধে দমন নীতি চালানোর অভিযোগ যে দিন থেকে উঠেছে, সে দিন থেকেই কোচবিহারে তৃণমূলের ‘দিন গিয়াছে’। প্রথমে লোকসভায় বিজেপির কাছে হাতছাড়া কোচবিহার আসন। তার পরে বিধানসভা ভোটে ৯টির মধ্যে ৬টিতেই হার। হেরেছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়ের মতো ওজনদার প্রার্থীরা। তার পর থেকেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব বেড়েছে অনন্তের।
কিন্তু কতটা বেড়েছে গুরুত্ব? অনন্ত জানালেন, এ বারে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলা ভাষা মোটে দেড়শো বছরের পুরনো। অনন্তের দাবি মতো সে কথা যদি মুখ্যমন্ত্রী শুনে মেনে নেন, তা হলেই বুঝতে হবে জিসিপিএ প্রধানের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়েছে।
অন্তরালে থেকে এই গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন আরও এক জন। তিনি কেএলও প্রধান জীবন সিংহ। যাঁর নাম শুনলেই আবার অনন্ত খেপে উঠছেন। বিধানসভা ভোটের পরে জীবন সিংহ কয়েকটি ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বিজেপি সাংসদ জন বার্লা এবং অনন্ত মহারাজের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। জীবন যা বলেছিলেন তার নির্যাস: অনন্তের উপরে অত্যাচার হয়েছে। সেই জীবন এখন শান্তি আলোচনায় বসেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে। তাঁরও দাবি, গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য। এই নিয়েই প্রশ্ন করা হয়েছিল অনন্ত মহারাজকে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, আলাদা রাজ্য নিয়ে এমন কোনও আলোচনা হলে তিনি কি যোগ দেবেন?
মুহূর্তে খেপে যান অনন্ত। তিনি বলেন, ‘‘আমি কেন জীবনের সঙ্গে আলোচনায় বসব? ও তো জঙ্গি (টেররিস্ট)। ও তো শান্তি আলোচনায় বসেছে। আগে ও মূলস্রোতে ফিরুক, তার পরে তো অন্য আলোচনা।’’ তিনি রীতিমতো চড়া সুরে বুঝিয়ে দেন, জীবনের সঙ্গে কোনও ভাবেই তাঁর নাম একসঙ্গে উচ্চারণ করা ঠিক নয়।
উত্তেজিতই হয়ে পড়েছিলেন অনন্ত। তার পরে হাতে এতক্ষণ ধরে নাড়াচাড়া করা ক্যাপসুল দু’টি একের পর এক খুলে নিয়ে ভিতরের গুঁড়ো মুখে ঢেলে দেন। তার পরে গ্লাস থেকে জলে চুমুক।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য সামলে নেন তিনি। তার পরে জানতে চান, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী হবে? তাঁকে কি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি পাকড়াও করবে? আলোচনা করেন অন্য আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতীয় সেনা পুনর্দখল করবে বলে নিজের বিশ্বাসও ব্যক্ত করেন তিনি।
এত কিছুর পরেও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়— অনন্তের কোচবিহার রাজ্যের দাবি কি শেষ পর্যন্ত শুনবে কেন্দ্র? তিনি নিজেও কি ততটাই আশাবাদী? সম্প্রতি অমিত শাহের কাছ থেকে দিল্লি যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও বৈঠকে কি সন্তুষ্ট অনন্ত? তা হলে কেন হঠাৎ বলবেন, কেন্দ্র কথা রাখছে না?
অনন্তের অপেক্ষা কি শেষ হবে?
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy