কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে। জলপাইগুড়িতে তা-ও কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে তিনটি আসন জিতে। এই ফলের নেপথ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই অন্যতম কারণ বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির। সেই দ্বন্দ্ব সামলাতে সংগঠনে এ বারে নতুন মুখ আনার উপরেই জোর দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের মধ্যে অল্প বয়সীদের সংখ্যাও যথেষ্ট। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মতো বর্ষীয়ান নেতাকে পাঠানো হল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বে। কিন্তু তাঁর মেয়ে পাপিয়া ঘোষকে দার্জিলিং (সমতল)-এর জেলা সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি রবির সঙ্গে পার্থপ্রতিম রায়ের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। কোচবিহার জেলা সভাপতির পদ থেকে পার্থকে সরিয়ে তাঁকে এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যানের পদ দেওয়াটাও তাই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কোচবিহারের জেলা সভাপতি হয়েছেন গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ। যদিও কোচবিহারে তৃণমূলের একাংশের দাবি, জেলার সাংগঠনিক পদেও পার্থর লোকজনই রইলেন। আলিপুরদুয়ারে মৃদুল গোস্বামীকে সরিয়ে প্রকাশ চিকবরাইককে জেলা সভাপতি করা হয়েছে। জলপাইগুড়িতে কৃষ্ণ কল্যাণীর জায়গায় এসেছেন মহুয়া গোপ।
সংগঠন ঢেলে সাজতেও কি টিম পিকে-র হোমওয়ার্ক কাজে লেগেছে? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ, বেছে বেছে তুলনায় অপরিচিত এবং স্বচ্ছ মুখদের দায়িত্বে নিয়ে আসা। জেলা সভানেত্রী হয়ে যেমন মহুয়া গোপ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, “আমার মতো একজন সাধারণ কর্মীকে এত মর্যাদা, ভালবাসা এবং গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে, তা ভাবতেই পারিনি।” জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সভাপতি কৃষ্ণকুমার কল্যাণীকে রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। যুব সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে রাখা হলেও শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি করা হয়েছে রাজেশ লাকড়াকে। মনে করা হচ্ছে, জেলার চা বলয়ে আদিবাসী ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ। সম্প্রতি রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগার উত্তরবঙ্গের একাংশে স্বশাসনের দাবি তুলেছেন। যা কৃষ্ণ কল্যাণীর পছন্দ ছিল না। আদিবাসী ভোটের জন্যই আদিবাসী প্রধান জেলা আলিপুরদুয়ারে প্রকাশ চিকবরাইককে সভাপতির পদে বসানো হয়েছে, মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই। প্রাক্তন সভাপতি মৃদুল গোস্বামীকে চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে। দলের নেতাদের একাংশের দাবি, মৃদুলের উপরেও দল যে আস্থা হারায়নি সে বার্তাও দেওয়া হল।
তবে আসল চমক এসেছে কোচবিহারে। এখানে রবি বা পার্থ, কাউকেই সভাপতির পদে রাখা হয়নি। সে জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে দলের পুরনো দিনের কর্মী গিরীন্দ্রনাথ বর্মণকে। চেয়ারম্যান হয়েছেন উদয়ন গুহ। হেরে গেলেও যে ভাবে দিনহাটায় মাটি কামড়ে নিশীথ প্রামাণিকের মতো বিজেপির ওজনদার নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন উদয়ন, সে জন্যই তাঁকে ‘পুরস্কৃত’ করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অন্য ‘শরিকদেরও’ সংগঠন থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
তবে রবি-পার্থকে ‘পুনর্বাসন’ দিয়েছে দল। একই ভাবে উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিনয়কৃষ্ণ বর্মণকে। সেখানে সদস্য করা হয়েছে ফজলে করিম মিয়াঁকে।