Advertisement
E-Paper

School Dropouts: স্কুল নেই, তাই মুরগি ধরতে যায় পড়ুয়ারা

উদ্বিগ্ন প্রাথমিক স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিত মণ্ডল শুক্রবার নিজেই গিয়েছিলেন কইমারি গ্রামে।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০০
স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিত মণ্ডল শুক্রবার নিজেই গিয়েছিলেন কইমারি গ্রামে।

স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিত মণ্ডল শুক্রবার নিজেই গিয়েছিলেন কইমারি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের ছাত্র সংসদে (চাইল্ড ক্যাবিনেট) যে ছেলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিল, সে এখন পড়া ফেলে মুরগি ধরছে। তার সঙ্গে জুটেছে গ্রামের আরও ছেলে। কেউ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, কেউ চতুর্থ, পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি। স্কুল বন্ধ, বাড়িতেরও অধিকাংশের পড়াশোনা নেই। সকালে তিন ঘণ্টা এবং দুপুরের পর দু’ঘণ্টা মুরগির খামারে কাটছে পড়ুয়াদের। ছুটে, লাফিয়ে মুরগিকে পাকড়াও করে। তার পরে তাকে চেপে ধরে থাকে যতক্ষণ না ইঞ্জেকশন ও চোখে ওষুধ দেওয়া হয়। এই কাজে পড়ুয়ারা মাথা পিছু পায় দিনে পঞ্চাশ টাকা। সেই টাকা অভিভাবকদের কাছেই জমা হয়। ছোটাছুটি করে ক্লান্ত ওই পড়ুয়ারা সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই ঘুমিয়ে পড়ে। পড়াশোনাটা আর হয় না। স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টের পেয়েছিলেন, বাড়িতে করতে দেওয়া প্রশ্নপত্রের উত্তরে খাতায় উত্তর লিখে দিয়েছে অন্য কেউ। অনেকের আবার সাতা পাতা। এক অভিভাবককে বেশ করে ধমকে দিয়েছিলেন মাস্টারমশাই। তার উত্তরেই অভিভাবক কবুল করেছিলেন, “কী করব মাস্টারমশাই। স্কুল বন্ধ, তাই ছেলেটা খামারে মুরগি ধরতে যায়। টাকাও পায়।”

উদ্বিগ্ন প্রাথমিক স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রণজিত মণ্ডল শুক্রবার নিজেই গিয়েছিলেন কইমারি গ্রামে। বাড়ি বাড়ি থেকে পড়ুযাদের ডেকে নেন তিনি। জয়দেব পাল নামে এক পড়ুয়া শোনায়, কী ভাবে মুরগি ধরতে হয়, কখন যেতে হয় কত টাকা পাওয়া যায়— এই সব। মাস্টারমশাই তাকে বলেন, “তুমি তো স্কুলে প্রধানমন্ত্রী ছিলে!” জয়দেব তখন অন্য পড়ুয়াদের দেখিয়ে দেয়, “স্যর, ও তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিল, ও খাদ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী। ওদের অনেকেই মুরগি ধরতে যায়।” পড়ুয়াদের দায়িত্বজ্ঞানের পাঠ দিতে স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশেই মন্ত্রিসভা গঠন করে নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক রণজিতবাবু নিজেই বলে ফেলেন, “এ তো দেখছি, আমার স্কুলের পুরো মন্ত্রিসভাই মুরগি ধরতে চলে যায়।”

প্রধান শিক্ষককে দেখে গ্রামের সব অভিভাবকেরা জড়ো হয়ে আসেন। দেবিকা রায় বলেন, “মাস্টারমশাই, স্কুল খুলে দিন। আমার মেয়েটা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাড়িতে একটুও পড়া হয় না। আমরা দেখাতে পারি না।” জলপাইগুড়ির সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতের কইমারি গ্রাম। চা বাগান এবং মুরগির খামারে ভরা গ্রাম। বাসিন্দা নরেশ পাল বলেন, “খামারের মুরগিও ধরতে গেলেই পালিয়ে যায়। বড়দের পক্ষে দৌড়ে মুরগি ধরা সম্ভব নয়। বাচ্চারা ভাল পারে।”

একদল পড়ুয়ার মধ্যে ছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রঞ্জিতা পালও। সে প্রধান শিক্ষককে গিয়ে জানায়, গত দু’বছরে তার স্কুলের খাতা-বই হারিয়ে গিয়েছে। সব দেখে শুনে প্রধান শিক্ষক গ্রামের মাঝে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, “আগামী সপ্তাহ থেকে আমি পড়াতে আসব। এই গাছের ছায়াতে পড়াব।” ক্লাসঘর বন্ধ আছে। তাই মুরগির খামার থেকে পড়ুয়াদের আবার বইখাতায় ফিরিয়ে আনতে ক্লাস বসবে কাঁঠালগাছের তলায়।

school dropouts jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy