শনিবার দুপুর দুটো। রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় ঢোকার জন্য প্রধান গেটের সামনে বহু মানুষের লাইন। পক্ষিনিবাসের এক কর্মী খাতায় সেইসব মানুষের নাম ও ফোন নম্বর লিখিয়ে তাঁদের সই করিয়ে নিচ্ছেন। পক্ষিনিবাস পরিদর্শনে যাওয়া সেইসব মানুষের মধ্যে তরুণ ও তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এক নিরাপত্তারক্ষী। সেই ভিড়ের সুযোগে খাতায় নিজেদের তথ্য না লিখেই পক্ষিনিবাসের ভিতরে জঙ্গলে ঢুকে পড়লেন অনেকেই।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের নির্দেশে ২৩ জানুয়ারি থেকে পক্ষিনিবাসে প্রবেশমূল্য অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে বন দফতর। সেই থেকেই সোমবার পক্ষিনিবাস বন্ধের দিন বাদে, সেখানে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। এতদিন পক্ষিনিবাসে ঢোকার ক্ষেত্রে একেক জনের প্রবেশমূল্য লাগত ১২০ টাকা। এখন তা লাগছে না। অভিযোগ, পক্ষিনিবাসে ভিড় বাড়তেই সেখানে শুরু হয়েছে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্ম। দিনভর পক্ষিনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ ও মহিলাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ, সেখানে মদ্যপান, অশালীন কাজকর্ম, মারপিট ও ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনাও বাড়ছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র বন দফতরের ভূমিকায় পরিবেশ ও পশুপ্রেমীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
রায়গঞ্জ ডিভিশনের বনাধিকারিক ভুপেন বিশ্বকর্মা বলেন, “পক্ষিনিবাসে অসামাজিক কার্যকলাপ রুখতে কিছুদিন আগে নজর ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। পক্ষিনিবাসের সীমিত নিরাপত্তারক্ষীরা যতটা সম্ভব সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। পুলিশকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।’’ তিনি জানিয়েছেন, পক্ষিনিবাসে প্রবেশমূল্য বাতিল হওয়ার পর পর্যটক ও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার খাতায় তাঁদের বিভিন্ন তথ্য লিখে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনও কারণে পক্ষিনিবাসে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতেই ওই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার বলেন, ‘‘পক্ষিনিবাসে পুলিশের নিয়মিত নজরদারি রয়েছে।”
রায়গঞ্জের একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া ও পরিবেশকর্মী কৌশিক ভট্টাচার্যের দাবি, পক্ষিনিবাসে সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখতে বন দফতরের পাশাপাশি পুলিশের আরও নজরদারি বাড়ানো জরুরি। কৌশিক বলেন, ‘‘পক্ষিনিবাসে পরিবেশ না ফিরলে পড়ুয়া ও ছোটদের মধ্যে খারাপ প্রভাব পড়বে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)