E-Paper

সরকারি হস্তক্ষেপেও কাটল না বোনাস-জট, ডাক আন্দোলনের 

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৪৭

একের পরে এক চারটে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমাধানসূত্র না মেলায়, শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের তরফে পাহাড়ের চা বাগানের জন্য ১৬ শতাংশ বোনাসের ঘোষণা করা হল। শ্রম দফতরের নর্থ বেঙ্গল জ়োনের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার শ্যামল দত্ত এই বোনাস-নির্দেশিকা জারি করেন মঙ্গলবার। পাহাড়ের চা শ্রমিক সংগঠনগুলি এখনও ২০ শতাংশের দাবিতেই অনড়। শ্রম দফতরের নির্দেশিকা অগ্রাহ্য করে ২০ শতাংশের দাবিতে পুজোর মুখে পাহাড়ের বাগানে বাগানে কাজ বন্ধ করে দফতর ঘেরাও করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে আজ, বুধবার মহালয়ার দিনে দার্জিলিং শহরে শ্রমিক সমাবেশেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আগামী কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলে জানানো হয়েছে। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-প্রধান অনীত থাপা অবশ্য এ দিন রাত পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি।

এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে পাহাড়ের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এ দিন বৈঠকের পরে, শিলিগুড়ির শ্রমিক ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড বলেছেন, ‘‘এ ভাবে বোনাস ঘোষণা করে সমস্যা মিটল না। উল্টে, আগামী দিনে পাহাড়ে আন্দোলন হতে পারে এবং তা হিংসার দিকেও এগিয়ে যেতে পারে বলে আমার আশঙ্কা। কারণ, শ্রমিকেরা নেতাদের কথাও শুনছেন না।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার বেশি রাতে শ্রম দফতরের তরফে সংগঠনগুলিকে মঙ্গলবার সকালে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য ডাকা হয়। সকালে উঠে অনেকেরই পাহাড় থেকে আসতে সময় লেগে যায়। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ততক্ষণে শ্রম দফতর সরকারি নির্দেশিকা তৈরি করে বিভিন্ন স্তরে দিয়ে দেয়। তাতে ১৬ শতাংশ বোনাসের কথা চাউর হতে থাকে। চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক বলেন, ‘‘বৈঠকে সবাই আসার আগেই শ্রম দফতর বোনাসের নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে তা মানা হয়নি। পরে তা দেওয়ায় সব শ্রমিক সংগঠন বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।’’ তিনি জানান, পুজোর মুখে রাজ্য সরকার সমস্যা মেটাতে গিয়ে জটিলতা বাড়িয়ে তুলল। শ্রমিকেরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। পাহাড়ে আজ, বুধবার থেকে আন্দোলন শুরু হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সরকারের পাশে থেকে বরাবর সমন্বয়ের কথা বললেও এ দিন সন্ধ্যা থেকে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পুরোপুরি ‘বেসুরো’। অনীত থাপার দলের চা শ্রমিক সংগঠন ‘হিল-তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি জেবি তামাং বলেন, ‘‘এ দিন থেকে আমাদের লড়া‌ই রাজ্য সরকার এবং মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে শুরু হল। বাগানে কাজ হবে না, চা পাতা বাইরে যাবে না। দফতর ঘেরাও করে আন্দোলন হবে। হাজিরা কাটলে, তীব্র আন্দোলন হবে।’’

শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য, কম উৎপাদন ও লোকসানের কথা বলে কম বোনাসের কথা বার বার বলা হচ্ছে। সমতল তরাই এবং ডুয়ার্সে ১৬ শতাংশ হয়েছে তা-ও সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু সবাই ভুলে যাচ্ছে, তরাই এবং ডুয়ার্সে চা পাতা ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে দার্জিলিং চা বিশ্ববিখ্যাত। অনেক সময়ে পাতার দাম ৪০ হাজার টাকার কেজি ওঠে। পাহাড়ের চায়ের কেজি প্রতি ১০-২০ হাজার টাকা দর ওঠা, কোনও ব্যাপার নয়য়। তাই পাহাড়ের জন্য ২০ শতাংশ বোনাসই প্রয়োজন।

পাহাড়ের শাসক, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা থেকে জনমুক্তি মোর্চা, সিপিএম, জিএনএলএফ থেকে তৃণমূলের মতো আটটি চা শ্রমিক সংগঠন এ দিন অবধি এক সঙ্গে চললেও, মঙ্গলবারের সরকারি সিদ্ধান্তের পরে তৃণমূল যৌথ মঞ্চে কতটা থাকবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

দলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা এনবি খাওয়াস বলেন, ‘‘সরকার নির্দেশিকা দিয়েছে। আমরা মঞ্চে ছিলাম। বাকিটা দলীয় স্তরে আলোচনা করে স্থির হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy