E-Paper

প্রশাসন ‘মানবিক’ হলে মরতে হত না ধানীকে, বলছে বাগান

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সরকারি কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেতেন না ধানীরা। পেতেন না কোনও ভাতা, রেশনও।

সৌম্যদ্বীপ সেন

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩০
ধানী ওরাওঁয়ের স্ত্রী।

ধানী ওরাওঁয়ের স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র ।

প্রশাসন আরও একটু ‘মানবিক’ হলে হয়তো এ ভাবে মৃত্যু হত না কালচিনি ব্লকের মধু চা বাগানের শ্রমিক ধানী ওরাওঁয়ের— এমনই দাবি করছেন বাগানের শ্রমিকদের একাংশ। ২ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ধানীর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী আশারানি। কী কারণে ধানীর মৃত্যু হয়েছে, সে শংসাপত্র এখনও মেলেনি। তবে অভিযোগ উঠেছে, অনাহারে মৃত্যু হয়েছে ওই শ্রমিকের। যদিও প্রশাসন সে কথা মানেনি। মানেননি স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যাও।

বাগানের জোড়া লাইন এলাকায় বুধবার গিয়ে দেখা গেল, বাঁশের খুঁটিতে ত্রিপলের দেওয়াল, মাটির মেঝের ঘরে থাকতেন ওই দম্পতি। পাশে একটি পাকা বাড়ি। জেলা প্রশাসনের দাবি, বাড়িটি ধানীর ভাই চৈতু ওরাওঁয়ের। সেখানেই থাকতেন দম্পতি। তবে অসুস্থতা বাড়ায় তাঁদের ওই কাঁচা ঘরে রাখা হয়। এ দিন চৈতুকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বহু চেষ্টাতেও যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে।

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, সরকারি কোনও প্রকল্পের সুবিধা পেতেন না ধানীরা। পেতেন না কোনও ভাতা, রেশনও। পড়শি কয়েক জনের দেওয়া খাবারই ছিল তাঁদের ভরসা। বাগানের স্থায়ী শ্রমিক হলেও, অসুস্থ থাকায় কাজে যেতে পারতেন না ধানী। মজুরি পেতেন কি না, তা নিয়েও রয়েছে ধন্দ। কয়েক জন বাগানবাসী জানান, ধানীর আধার কার্ড সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। আধারের সঙ্গে রেশন কার্ড ‘লিঙ্ক’ করা ছিল না। অসুস্থ হওয়ায় তিনিও তা করতে যেতে পারতেন না। তাই মিলত না রেশন। তাঁর স্ত্রীয়েরও আধার কার্ড নেই। তিনিও পেতেন না সরকারি সুবিধা।

সংশ্লিষ্ট বিজেপির সাতালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য চামেলি ওরাওঁয়ের বক্তব্য, ‘‘২০২১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মধু চা বাগানে সহায় প্রকল্প চালু ছিল। ওই প্রকল্পে এক বেলা খাবার পেত পরিবারটি। আধার কার্ড দেখাতে না পারায় রেশনের সঙ্গে আধার লিঙ্ক হয়নি। প্রায় এক বছর ধরে পরিবারটির রেশন বন্ধ। এই অবস্থায় আশপাশের বাড়ির লোকের দেওয়া খাবারের উপরেই পরিবারটির ভরসা ছিল।’’ চামেলির দাবি, ‘‘না খেতে পেয়ে নয়, অসুস্থতার জন্যই ধানীর মৃত্যু হয়েছে।’’

পড়শি এক বাগান শ্রমিকের কথায়, ‘‘ধানী অসুস্থ ছিল। আশারানির কিছু সমস্যা রয়েছে। এ সব কারণে, তাঁরা হয়তো সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে যা-যা করণীয়, নিজেরা ঘুরে ঘুরে তা করতে পারেননি। কিন্তু প্রশাসন যদি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ওই সব প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ব্যবস্থা করত, তা হলে হয়তো ধানীকে এ ভাবে মরতে হত না।’’

যদিও কালচিনির ফুড ইনস্পেক্টর পল্লবকুমার দাসের দাবি, ‘‘গত অক্টোবর পর্যন্ত ধানী ওরাওঁ রেশন নিয়েছেন। এর পরে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক নিয়ে সমস্যার সমাধানে আমাদের কর্মীরা একাধিক বার তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন। তবে অসুস্থ থাকায় তাঁর হাতের ছাপ ঠিক মতো মিলছিল না। চোখের মণি স্ক্যান করার চেষ্টাও সফল হয়নি। তাই সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, তিনি রেশন পেতেন না। তবে আমাদের কর্মীরা মানবিক কারণে মাঝেমধ্যে তাঁদের কিছু রেশন সামগ্রী দিয়ে আসতেন।’’

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, ‘‘অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ ঠিক নয়। মৃতের পরিবারও এমন অভিযোগ করেনি। আমরা চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যাকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখি। বাগানে-বাগানে একাধিক বার শিবির করা হয়েছে। সেখানে যে সব সমস্যা উঠে এসেছে, তার বেশিরভাগই সমাধানের চেষ্টা করেছি। সরকারি ত্রাণও দেওয়া হয়েছে বাগানের সব শ্রমিককেই। এ ছাড়া, আধারের সমস্যা দূর করতে প্রতিটি ব্লকে শীঘ্র শিবিরও শুরু হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalchini

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy