Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Tea Garden

Tea Garden: ‘কই, চা বাগান তো খোলে না’

চা শ্রমিকদের এমনই অভিযোগ নিয়ে আরও একটি ১৫ ডিসেম্বর পেরিয়ে গেল। এক সময় এই দিনটিকে আর্ন্তজাতিক চা দিবস হিসেবে পালন করা হত।

হতাশা: অনেক চা বাগান এলাকাতেই আজ এই ভগ্ন ছবি।

হতাশা: অনেক চা বাগান এলাকাতেই আজ এই ভগ্ন ছবি। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৪
Share: Save:

শীতের কনকনে রাতে টিনের চালের ফুটো দিয়ে নাগাড়ে বিন্দু বিন্দু জল পড়তে থাকে। বৃষ্টি নয়। তবে বৃষ্টির মতোই ঘরময় ঝরে পড়ে জলবিন্দু। লেপ-কম্বল ভিজে যায়। ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে ওঠে শরীর। টিনে কুয়াশা লেগে জল হয়। সেই জল গড়ায় চালের ফুটো দিয়ে। এ তো গেল রাতের কথা। ঘরে থাকলে দিনের বেলা ঠান্ডা হাওয়া তিরের ফলার মতো শরীরে বেঁধে। কারণ, জানলার পাল্লা অর্ধেক ভেঙে গিয়েছে। মেঝে দিয়ে মাটি ওঠে। চা বাগানের আবাসনের এমনই হাল, শোনালেন অনিমা খাওয়াস। কার্শিয়াং মহকুমার যে বাগানের আবাসনের এমন গল্প, সেই বাগানের পাতা বিদেশেও যায়। সেই চা পাতা তোলেন যে শ্রমিকেরা তাঁদের বেশিরভাগের আবাসনেরই জরাজীর্ণ দশা। বর্ষাকালে ঘরময় জল থইথই করে। শীতকালে চালের ছিদ্র চুঁইয়ে কুয়াশা নেমে আসে। দার্জিলিঙের বহু চা বাগানে শ্রমিকদের জন্য পানীয় জলের সরবরাহ নেই, বাগানের হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। বাগান এলাকায় ভাল স্কুল নেই, নির্বিঘ্ন আশ্রয়ও নেই।

চা শ্রমিকদের এমনই অভিযোগ নিয়ে আরও একটি ১৫ ডিসেম্বর পেরিয়ে গেল। এক সময় এই দিনটিকে আর্ন্তজাতিক চা দিবস হিসেবে পালন করা হত। বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকে ১৫ ডিসেম্বর উদ্যাপন করা হত। ২০০৫ সাল থেকে এই উদ্যাপন শুরু হয়েছিল। দু’বছর ধরে ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২১ মে আর্ন্তজাতিক চা দিবস পালিত হচ্ছে। তবু স্মৃতির ছায়ায় ১৫ ডিসেম্বরও চা উৎপাদক দেশগুলির বিভিন্ন প্রান্তে অনাড়ম্বর ভাবেই উদ্যাপন হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও দার্জিলিং হোক বা ডুয়ার্স— চা শ্রমিকদের অভিযোগগুলি দিনের পর দিন একই থেকে গিয়েছে।
দার্জিলিঙের চা শ্রমিক অনিমা খাওয়াসের কথায়, “আমাদের বাগানের শ্রমিক আবাসনগুলি জরাজীর্ণ। কোনও সংস্কার হয় না। নিজেরাও টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারি না।” সোনোডা লাগোয়া একটি চা বাগানে মাস কয়েক ধরে পানীয় জলও নেই। অনিমার কথায়, “চা দিবস পালনের অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। তবে আমরা যাই না। আমাদের ডাকেও না। ডাকলেও যেতাম না, কারও উৎসবের আলো-রোশনাই আমাদের কাছে পর্যন্ত এসে পৌঁছয় না।”

ডুয়ার্সের মেটেলির কিলকট চা বাগানের মহল্লায় মহল্লায় অপরিচ্ছন্ন এবং অপুষ্টির ছবি। শিশুদের কারও পেট বেঢপ আকার নিয়েছে, কারও হাড় চামড়া ফুঁড়ে প্রায় বেরিয়ে আসার জোগাড়। বন্ধ রায়পুর চা বাগানে কয়েক বছর ধরে বন্ধ বাগান ভাতা নেই। শ্রমিকেরা বাগান ছেড়ে অন্যত্র কাজে চলে যাচ্ছেন। রোজ সকালে বাগানের সামনে এসে দাঁড়ায় ট্রাক্টর ভ্যান। শ্রমিকরা তাতে উঠে পড়েন। ট্রাক্টর চলে যায় শহরের কোথায়, বা অন্য কোনও গ্রামে। সেখানে বালি তোলা, পাথর ভাঙা, বস্তা টানার কাজ করেন শ্রমিকেরা। এক একদিন হাতে পান একশো থেকে দেড়শো টাকা। জলপাইগুড়ির বন্ধ বাগানের শ্রমিক সোনিয়া ভূমিচ বলেন, “বছরের পর বছর চলে যায়, কই বাগান তো খোলে না।”

রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা দার্জিলিঙের বাম চা শ্রমিক নেতা সমন পাঠকের কথায়, “নব্বইয়ের দশকের পরে কোনও চা বাগানেই নতুন করে আবাসন তৈরি হয়নি। শ্রমিকদের পানীয় জলের সরবরাহও প্রায় নেই। বন্ধ বাগানে তো ঘরে ঘরে অপুষ্টি। দিনের পর দিন ধরে চা শ্রমিকদের সমস্যা একই রয়ে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Garden tea estate Tea Garden Wokers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE