চিহ্নিত হয়েও সামাজিক পুনর্বাসনের সুবিধা পায়নি ১১ ও ৬ বছরের দুই শিশুশ্রমিক ভাই রাহুল এবং মন্মথ মালি। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থানার বাদামাইল এলাকার হতদরিদ্র মহিলা তন্তু মালির তিন নাবালক ছেলের মধ্যে মেজ সাগরও ছিল শিশু শ্রমিক। গত মাসের ১৫ তারিখে চায়ের দোকানে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রেকারের ধাক্কায় সাগরের (৮) মৃত্যু হয়। রাস্তায় ধারে বাসস্টপের কাছে একটি চায়ের দোকানে খদ্দেরের কাছে চায়ের কাপ পৌঁছনো ও বসন মাজার কাজ করত সে। ওই দিন কাজ সেরে বিকেল ৩টা নাগাদ দোকানে ভাত খেয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনা তার প্রাণ কেড়ে নেয়।
সাগরের দাদা রাহুল এবং ছোট ভাই মন্মথকেও লোকের দোকানে কাজ করতে হয়। বাবা সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে অভিযোগ। অসহায় তন্তুদেবী লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। তন্তুদেবীর কথায়, ‘‘সকলের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারি না। মাস মাইনে ও একবেলা ভাত খাওয়ার চুক্তিতে ছেলেদের দোকানের কাজে লাগানো ছাড়া উপায় কী।’’
সাগরের মৃত্যুর পরে এলাকায় যান জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সূরজ দাস। সাগরের দুই শিশু শ্রমিক ভাইয়ের হদিশ পেয়ে তাদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা সমাজকল্যাণ দফতর এবং সিডব্লিউসি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন জানান। কিন্তু এখনও অবধি ওই দুই শিশু শ্রমিককে মূল স্রোতে ফেরাতে প্রশাসনিক কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। সুরজ বলেন, ‘‘আমরা শিশুশ্রমিকদের চিহ্নিত করে উদ্ধার করি। পরে তাদের পুনর্বাসনের ঠিক মতো ব্যবস্থা না হওয়ায় সমস্যা থেকে যাচ্ছে।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার সজল দাসের কথায়, ‘‘বাদামাইলের দুই শিশু শ্রমিকের বিষয়ে খোঁজ নেব।’’ তবে গত ২০১২ সালের শেষ সমীক্ষার পর জেলায় নতুন করে শিশু শ্রমিকদের নিয়ে সমীক্ষা হয়ে ওঠেনি। ২০১৭ সালে জেলায় কত জন শিশুশ্রমিক রয়েছে জানতে সরকারী স্তরে সমীক্ষার উদ্যোগ হয়েছে বলে সজলবাবু জানিয়েছেন। এ জেলায় ৪০টি শিশুশ্রমিক বিদ্যালয়ে গড়ে অন্তত দু’হাজার শিশু শ্রমিককে শিক্ষার আঙিনায় আনা গিয়েছে বলে সজলবাবু দাবি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy