চায়ের দোকানের আড়ালে চোলাই বিক্রির অভিযোগে গ্রামবাসী ও চোলাই বিক্রেতা পরিবারের গন্ডগোলে ভস্মীভূত হল চায়ের দোকান-সহ লাগোয়া তিনটি বাড়ি। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে কালিয়াগঞ্জের ধনকৈল পঞ্চায়েতের বেলতলি রেলগুমটি এলাকায়। দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগুন লাগানোর ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেলেও এ দিন সন্ধে পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। চোলাই বিক্রির অভিযোগে মারপিটের জেরে দু’পক্ষের ছয় জন আহত হয়। পাঁচ জনকে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও স্থানীয় বাসিন্দা ৬২ বছরের চম্পলা রায়ের মাথা ফেটে যাওয়ার তাঁকে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়। এ দিন বিকালে ঘটনাস্থলে যান জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নিতাই বৈশ্য, জেলা পরিষদের সদস্য রামদেব সাহানি প্রমুখ। ওই তিন পরিবারকে পলিথিন দেওয়া ও আর্থিক সহায়তা করা হয় বলে জানান নিতাই।
বেলতলি রেলগুমটি এলাকায় রেলের জমির উপর মুলিবাঁশের চাটাই ও টিনের চাল দেওয়া বাড়ি ও চায়ের দোকান গঙ্গারানি রায়ের। পাশেই রেলের জমিতে চাটাই ও টিনের চাল দেওয়া বাড়ি সরস্বতী রায় ও মানিক রায়ের। দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ঘেঁষা চায়ের দোকানের আড়ালে গঙ্গারানি চোলাই বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। স্থানীয় পারুল বর্মণ বলেন, “এ দিন গঙ্গারানি পড়শি দুই যুবতীকে অসম্মানজনক কথা বলায় গ্রামবাসীদের সঙ্গে গঙ্গারানির কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই হাতাহাতি থেকে লাঠি নিয়ে মারপিট ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।’’ তাঁর দাবি, এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় চায়ের দোকানে চোলাই বিক্রি বন্ধ করতে এলাকার মহিলারা বার দুয়েক থানায় গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তার পরেও চোলাই বিক্রি বন্ধ না-হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভস্মীভূত বাড়ির দিকে তাকিয়ে সরস্বতী বলেন, “তাঁর ও তাঁর কাকা শ্বশুর মানিক রায়ের রান্না ঘর-সহ শোওয়ার ঘর পুড়ে যায়। ঘরে থাকা সমস্ত জামাকাপড় ও আসবাব ছাই হয়ে যায়। এখন কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না।’’ চোলাই বিক্রেতা গঙ্গারানি রায়ের দাবি, “বাড়তি লাভের আসায় তিনি তাঁর দোকানে চোলাই মদ বিক্রি করেন। চোলাই বিক্রির অভিযোগে কিছু উত্তেজিত গ্রামবাসী এ দিন দুপুরে আমার চায়ের দোকানে এসে ঝামেলা করে। প্রতিবাদ করতেই আমাকে, দুই ছেলে, মেয়ে ও জামাইকে তাঁরা মারধর করে। দোকানের সঙ্গে লাগানো ঘর ভাঙতে শুরু করে।“ তাঁর দাবি, মারধর ও ভাংচুরের মাঝেই মিঠুন বর্মণ-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। অভিযোগ অস্বীকার করে মিঠুন বলেন, ‘‘চোলাই বিক্রির অভিযোগে গ্রামবাসীদের সঙ্গে চোলাই বিক্রেতা পরিবারের মারামারির সময় নিজের ঘরে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দেয় ওই পরিবার। চোলাই বিক্রির প্রতিবাদ করায় নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে গ্রামবাসীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন গঙ্গারানি।“ কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ এলেই আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)