প্রায় ৮ ফুট দেওয়াল। তার উপর অন্তত দেড়-দু’ফুটের কাঁটাতার। গভীর রাতে তা টপকে বালুরঘাটের হোসেনপুরে সরকারি শুভায়ন হোম থেকে পালাল তিন নাবালক। রবিবার রাতের ঘটনা। তাদের পালানোর ঘটনা ক্যামেরায় ধরাও পড়ে। সোমবার রাত পর্যন্ত ওই তিন নাবালকের কোনও হদিশ মেলেনি বলেই জানায় পুলিশ। এর আগেও ওই হোম থেকে দেওয়াল টপকে পালিয়েছিল নাবালকেরা।
বালুরঘাটের ওই হোমে অন্তত একশো আবাসিক থাকে। অধিকাংশ উদ্ধার হওয়া। কয়েক জনের ক্ষেত্রে পরিবারের অবহেলায় তারা সেখানে রয়ে গিয়েছে। এরকমই তিন আবাসিক রবিবার পালিয়ে যায়। কিন্তু কীভাবে? জেলা নারী শিশু ও সমাজকল্যাণ বিভাগের ওই হোমে অস্থায়ী সুপার রয়েছেন গত এক মাস থেকে। অভিযোগ, তার জন্য নজরদারি এবং ব্যবস্থাপনা কিছুটা ঢিলেঢালা রয়েছে। রাতে রক্ষী থাকাকালীনই ওই তিন নাবালক হোম চত্বরে জমে থাকা শুকনো ডালপালা এনে জড়ো করে। সেগুলি কাঁটাতারের উপর রেখে ঢাল হিসেবে ভর করে তারা পালিয়ে গিয়েছে বলেই খবর। সেই সময় কী রক্ষী ঘুমিয়ে ছিলেন? জেলা প্রশাসনিক ভবন সূত্রে সেরকমই ইঙ্গিত। তা না হলে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ থাকার পরেও নাবালকরা পালাতে পারত না বলেই মনে করছেন সকলে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) হ্যারিস রসিদ বলেন, ‘‘আমরা সমস্ত দিক যাচাই করছি। কোনও গাফিলতি থাকলে তা সারিয়ে নেওয়া হবে। ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’
রবিবার রাতের ঘটনায় সোমবার সকালে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে প্রশাসন। দক্ষিণ দিনাজপুরের এক নাবালক এক বছর, একজন দেড় বছর এবং মালদহ থেকে তৃতীয় নাবালক প্রায় ৫ মাস হল ওই হোমে স্থান পেয়েছিল। নাবালকদের নিয়মিত ভাবে কাউন্সেলিং করা হয় বলে দাবি। তার পরেও তাঁদের মানসিক অবস্থার ইঙ্গিত মেলেনি বলেই দাবি করা হয়েছে। রক্ষীরা ঠিক মত রাতে ডিউটি দিচ্ছে কী? আবাসন চত্বরে আবর্জনা, শুকনো ডালপালা নিয়মিত ভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে কী? এ সব নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। কারণ এর আগেও একই ঘটনা এই হোমে ঘটেছিল। তা থেকে কি কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নিয়েছে? জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন মন্দিরা রায় বলেন, ‘‘নিরাপত্তা ও নজরদারি হোমে বাড়াতে হবে। আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।’’ জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেছেন, ‘‘নাবালকদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজও যাচাই করছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)