শিলিগুড়ি মহকুমা এলাকায় নিহত নাবালিকা ছাত্রীর বাবা ও মায়ের সঙ্গে রবিবার দেখা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পরে, সাংবাদিক বৈঠকে ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে রাজ্যপালের মন্তব্য, "কন্যা সুরক্ষা ছাড়া, কন্যাশ্রী প্রকল্পের গুরুত্ব থাকে না।" ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি না করার কথাও বলেছেন তিনি। তবে তৃণমূল এবং বামেরা এ ব্যাপারে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। ঘটনাটির অহেতুক রাজনীতিকরণ ঠিক নয় বলে মত প্রকাশ করেছে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনও।
রবিবার দুপুরে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে সোজা নাবালিকার বাড়িতে পৌঁছন তিনি। রাজ্যপালের সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা ও বিজেপি বিধায়কেরা। এ দিন প্রায় আধ ঘণ্টা নাবালিকার বাড়িতে ছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের কাছে নাবালিকার মা ও বাবা আবেদন করেন বিচার যাতে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে হয় এবং অভিযুক্তের যাতে সর্বোচ্চ সাজা হয়।
পরে, শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, "নাবালিকাকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কোথাও হওয়া উচিত নয়। কন্যাশ্রী প্রকল্প রয়েছে আমাদের। কিন্তু কন্যা সুরক্ষা ছাড়া, কন্যাশ্রী প্রকল্পের গুরুত্ব থাকে না। শিশু ও মহিলাদের সুরক্ষার জন্য রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।" তাঁর সংযোজন: "এই এলাকায় মাদক পাচারের ঘটনা বাড়ছে। যার জন্য অপরাধ বাড়ছে বলে শুনলাম। অবিলম্বে এ সব বন্ধ করা উচিত। কাউকে দোষারোপ করছি না। তবে এটা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।"
তবে রাজ্যপালের মন্তব্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা তৃণমূল নেতা গৌতম দেব। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যপালের এমন বক্তব্যের কোনও মানে হয় না। রাজ্যপাল বলছেন, না কোনও দলের কেউ কথা বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। ঘটনার পরেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।’’ এক ধাপ এগিয়ে ধূপগুড়িতে উপনির্বাচনের প্রচারে আসা সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বেছে বেছে মালদহ, শিলিগুড়িতে যাচ্ছেন। রাজ্যপালের অফিস রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। রাজ্যপাল পদটিও ধীরে ধীরে দলীয় পদ হয়ে যাচ্ছে।"
রাজ্যপাল পৌঁছনোর আগে, এ দিন নাবালিকার বাড়িতে যান রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ও উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। সুদেষ্ণা বলেন, “আমরা (কমিশন) মনে করি, মৃতেরও মর্যাদা থাকে। এবং এমন একটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা অনভিপ্রেত।” নিহত নাবালিকার ময়না-তদন্তে যৌন হেনস্থার প্রমাণ মেলার কথা জানা গিয়েছে বলে দাবি করে সুদেষ্ণা বলেন, “আমরা তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ খেয়াল রাখছি। এমন ঘটনার পকসো ধারায় তদন্ত চলছে। আমরা দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার জন্য যা-যা সম্ভব করব।” রাজ্যপালের সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "উনি কেন আসছেন, আমার জানা নেই। আমরা আমাদের কাজের জন্যই এসেছি।"
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)