অবশেষে: তপসিখাতায় মিিছল তৃণমূলের। নিজস্ব চিত্র
তুষার বর্মণ খুনের ঘটনার এক সপ্তাহ পর অভিযুক্তদের ফাঁসি চেয়ে তপসিখাতায় মিছিল করল তৃণমূল। তবে তাতে যে স্থানীয়দের ক্ষোভ কমছে না, তা বুঝিয়ে দিয়েই যেন ওই মিছিলের পরই এলাকায় মশাল মিছিল বের করেন স্থানীয়রাও। বিকেল ও সন্ধ্যায় শাসকদল ও স্থানীয়দের এই দুই মিছিলকে ঘিরেই মঙ্গলবার উত্তপ্ত থাকল তপসিখাতা। তবে শাসকদলের এ দিনের মিছিলে দলের জেলা শীর্ষ নেতাদের কাউকে অবশ্য দেখা যায়নি। শীর্ষ নেতারা এ দিন তুষারের বাড়িতেও যাননি৷ এ দিকে, এই ঘটনার একমাত্র ধৃতকে মঙ্গলবার ফের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার তপসিখাতায় খুন হন তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ। অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলেরই স্থানীয় পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্ভু রায় তার দলবলের উপস্থিতিতে রিভলভার থেকে গুলি চালিয়ে তুষারকে খুন করে। ঘটনার পরই দলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সোনা রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু শম্ভু গ্রেফতার না হওয়ায় স্থানীয়দের আন্দোলন চলতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর দল বদল করে তৃণমূলের প্রভাব বিস্তার করা এক নেতার হাত মাথায় পড়তেই ভ্যান চালকের ছেলে শম্ভুর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। রাতারাতি বড়লোক হওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি কিংবা এলাকায় ‘দাদা’ হয়ে ওঠে সে। কিন্তু তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার হাত মাথায় থাকার জন্যই রিভলবার নিয়ে হুমকি ও মারধরের একাধিক অভিযোগ পেয়েও পুলিশ শম্ভুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। যারফলে স্থানীয় বাসিন্দারাও সেভাবে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।
কিন্তু তুষার খুন হতেই এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এতদিন চুপ করে থাকা এলাকার হাজার হাজার মানুষ শম্ভু সহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। শম্ভুর গ্রেফতারের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এই আন্দোলনে দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা নেতৃত্ব দিলেও তাতে তৃণমূলের ব্লক বা জেলা নেতাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বরং তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে আঁচ করতে পেরেই দু’দিন আগে শম্ভু-সহ অভিযুক্ত চার জনকেই দল থেকে বহিষ্কার করেন তৃণমূলের নেতারা। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার বা বুধবার তুষারের বাড়ি যাওয়ার কথাও বলেন তাঁরা। তবে এ দিন অবশ্য তৃণমূলের কোনও জেলা শীর্ষ নেতাই তুষারের বাড়ি যাননি।
তবে মঙ্গলবার বিকেলে দলের ঝান্ডা নিয়ে এলাকায় একটি মিছিল বের করে তৃণমূল। যাতে দলের পরোরপাড়ের অঞ্চল সভাপতি রতন মোহান্ত, আলিপুরদুয়ার- ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত রাভারা যোগ দিলেও ব্লক বা জেলার বড় মাপের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। এ দিন রতনবাবু বলেন, “এলাকায় আমরা দলের এক সৈনিককে হারিয়েছি। ঘটনায় দোষীদের আমরা ফাঁসি চাই। এ দিনের মিছিল থেকে সেই দাবি উঠেছে। আজ বুধবার দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব তুষারের বাড়ি যাবেন।” যদিও স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, খুনের ঘটনার পর এলাকায় নষ্ট হওয়া ভাবমুর্তি পুনরুদ্ধারেই এ দিন মিছিল করেছেন শাসকদলের নেতারা।
তুষারের জ্যাঠামশাই অরুণচন্দ্র বর্মণও প্রশ্ন তোলেন, “তুষার খুন হওয়ার পর থেকেই তো তৃণমূলের নেতারা ওকে দলের সৈনিক বলে প্রচার চালাচ্ছেন। তা সেই সৈনিকের জন্য রাস্তায় নামতে এতদিন লেগে গেল?” তৃণমূলের মিছিল শেষ হতেই শম্ভু গ্রেফতার না হওয়ার প্রতিবাদে নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মনোয়ারপুল এলাকায় মশাল মিছিল বের করেন স্থানীয়রাও। ওই এলাকাতেই অভিযুক্ত শম্ভুর বাড়ি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা এদিন বলেন, শম্ভু-সহ বাকি অভিযুক্তদের ধরতে ভিন্রাজ্যেও তল্লাশি চলছে।
সাতদিনের পুলিশ হেফাজত শেষে এ দিন একমাত্র ধৃত সোনাকে ফের আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হয়। সরকারপক্ষের আইনজীবী মদনগোপাল সরকার জানিয়েছেন, “পুলিশের তরফে ফের ছ’দিনের জন্য সোনাকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তিন দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy