Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লাভের অঙ্কে আলুকে পিছনে ফেলল টোম্যাটো

আলুকে পিছনে ফেলে এবার মুনাফার দৌড়ে এগিয়ে টোম্যাটো। ভিন রাজ্যের ক্রেতারাও ভিড় করেছেন জলপাইগুড়ি জেলার পাইকারি বাজার গুলিতে। ভাল মানের টোম্যাটো দশ টাকা কেজি দরে পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদে। চাষিদের কথায়, এবার টোম্যাটোর কদর আপেলের মতো।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

আলুকে পিছনে ফেলে এবার মুনাফার দৌড়ে এগিয়ে টোম্যাটো। ভিন রাজ্যের ক্রেতারাও ভিড় করেছেন জলপাইগুড়ি জেলার পাইকারি বাজার গুলিতে। ভাল মানের টোম্যাটো দশ টাকা কেজি দরে পাড়ি দিচ্ছে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদে। চাষিদের কথায়, এবার টোম্যাটোর কদর আপেলের মতো।

আলু চাষে মোটা টাকা আসে, জেলার চাষিদের এই প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে টোম্যাটো। কয়েক বছরে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা আলু চাষের দখলে চলে গেলেও, যে চাষিরা রাতারাতি প্রচুর লাভের আশা ছেড়ে টোম্যাটোর মতো সবজি চাষ ধরে রেখেছেন এবার ঝকঝকে হাসি তাঁদের মুখে। গত বছরেও টোম্যাটোর দাম ভাল ছিল। কিন্তু এবারের মতো নয়। চাষিরা জানান, পাইকারি বাজারে পাঁচ টাকা কেজি দাম পাওয়া গেলেও কিছু লাভ থাকে। এবার এপ্রিল মাস থেকে টোম্যাটোর পাইকারি বাজার ঝড়ের গতিতে তেজি হয়েছে। কেজি প্রতি দাম ৮ টাকা থেকে ১১ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে।

জেলা কৃষি আধিকারিক সুজিত পাল বলেন, “বাজার দেখে একচেটিয়া আলু উৎপাদনের ভাবনা ছেড়ে চাষে বৈচিত্র্য আনার শিক্ষা নিতে হবে চাষিদের। বুঝতে হবে শুধুমাত্র আলু চাষে মোটা টাকা আসে ওই ধারণা সঠিক নয়। এবার শুধু টোম্যাটো নয়, অন্য সবজি চাষিরাও যথেষ্ট ভাল দাম পেয়েছে। ব্যাতিক্রম একমাত্র আলু।”

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মরশুমে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় আলু চাষের এলাকা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর আগে দুই জেলায় আলু উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন ১০ লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে। ফাটকা লাভের আশায় ক্রমশ এলাকা বৃদ্ধি এবং সবশেষে অতিফলনের কারণে এবারও দুই জেলার বড় অংশের চাষিদের ঠকতে হয়েছে। কিন্তু অতিফলনের ধাক্কায় তাঁদের দিশেহারা দশা হলেও তেজি বাজার স্বস্তি উপহার দিয়েছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার টোম্যাটো চাষিদের। জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই জেলায় ৪ হাজার ৮৬৯ হেক্টর জমিতে টোম্যাটো চাষ হয়ে থাকে। গত বছর ১ লক্ষ ৩২ হাজার ১২০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। এবার উৎপাদনের পরিমাণ বাড়তে পারে। দফতরের জেলা আধিকারিক শুভাশিস গিরি বলেন, “টোম্যাটোর দাম এবার অনেক ভাল। বাইরের ক্রেতাদের ভিড় আছে বাজারে। বর্ষা এগিয়ে আসতে ওই সবজির উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে দাম বাড়ছে।”

চাষিদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বিঘা জমিতে টোম্যাটো চাষ করে এবার সহজে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘরে উঠেছে। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা গ্রামের টোম্যাটো চাষি গৌরাঙ্গ শর্মা ও বিহারীলাল শর্মা জানান, এক বিঘা জমিতে টম্যাটো চাষ করতে গড়ে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি জমিতে গড়ে ৫০ কুইন্টাল টোম্যাটো উৎপাদন হয়। পাইকারি বাজারে দাম ৮ টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। বড় মাপের ঝকঝকে লাল টম্যাটোর দাম ১১ টাকা কেজি চলছে। বিহারীবাবু বলেন, “দু’বিঘা জমি চাষ করেছি। সপ্তাহে তিন থেকে চার কুইন্টাল উঠছে। বাজার ভাল আছে। কয়েকটা দিন বৃষ্টি না হলে ফলন আরও ভাল হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE