বাইপাস: ডালখোলার যানজট কমাতে তৈরি হচ্ছে বাইপাস রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু নামই যথেষ্ট!
যেখান দিয়ে যাতায়াতের কথা শুনলেই আঁতকে ওঠেন অনেকে। ভূত-প্রেত-দত্যি-দানবের ভয়ে নয়। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরবার হওয়ার আশঙ্কায় বুক কাঁপে তাঁদের। বাসের চালক, ট্রাকের খালাসি, নিত্যযাত্রী শিক্ষক-চাকুরে, ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই ‘ডালখোলা-আতঙ্ক’-এ ভোগেন। বিশেষত, রোগীর পরিবারের লোকজনেরা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন। অ্যাম্বুল্যান্সে সাইরেন বাজলেও আগেপিছে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার উপায় থাকে না ডালখোলায়।
বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলছেই। প্রথম কারণ, ডালখোলার রেলগেট। দ্বিতীয়ত, দু’টি জাতীয় সড়কের বুক চিরে শহর। তৃতীয়ত, ডালখোলা রেল স্টেশন রেক পয়েন্ট। প্রতিদিন মালগাড়ি-প্যাসেঞ্জার, এক্সপ্রেস মিলিয়ে ট্রেন যাতায়াত করে অন্তত ১০০টি। ফলে ততবার বন্ধ থাকে রেলগেট। ডালখোলা এলাকায় পণ্যবাহী ট্রেনের সামগ্রীওঠানো-নামানোর ‘রেক পয়েন্ট’ রয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলে পণ্য পরিবহণকারী ট্রাকের জন্য যানজট তৈরি হয় বলে বাসিন্দাদের দাবি। উপরন্তু, ভুট্টার ফলনের সময় রাস্তার পাশে ধর্ম কাঁটাগুলিতে ভুট্টার ওজন করানোর জন্য ট্রাক ঢোকে ও বের হয় জাতীয় সড়ক দিয়েই। সে সময়ও যানজট লেগেই থাকে। যানজটের জেরে একদিকে দূরপাল্লার গাড়ি সহ যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ি যাত্রীদের অবস্থা নাভিশ্বাস হয়ে উঠে। ঘটে দুর্ঘটনাও। ডালখোলা পুরসভা সূত্রের খবর, গত এক বছরে দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তাই ডালখোলার পূর্ণিয়া মোড় থেকে শহরের রানিগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাইপাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় চার বছর আগে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৮৬.৫২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাইপাসের যে অংশে রেলগেট পড়েছে তার উপর একটি ফ্লাইওভার তৈরির কাজও শুরু হয়। কয়েকবছর কাজ চলার পর জমি অধিগ্রহণ সমস্যার কারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা কাজ বন্ধ করে দেয়। সাত বছর কাজ বন্ধ থাকার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও অরাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আন্দোলনের চাপে গত বছরের এপ্রিল মাসে বাইপাস রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করার জন্য প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।
এর পরেই নতুন করে টেণ্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বাইপাস রাস্তার কাজ শেষ করতে ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।
সেই কাজ এখন জোরগতিতে চলছে বলে দাবি খোদ জেলাশাসক আয়েষা রাণীর। তিনি বলেন, ‘‘ডালখোলা বাইপাসের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’’
কিন্তু, যতদিন না বাইপাসের কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন যানজটের যন্ত্রণা সইতে হবে ভেবে শিউরে ওঠেন হারুণ মণ্ডলের মতো অনেক ব্যবসায়ী। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা হারুণ মন্ডল বলেন, ‘‘ব্যবসার সূত্রে আমাকে শিলিগুড়ি যেতে হয়। ডালখোলা পৌঁছানো মাত্র উত্তেজনা বেড়ে যায়। ডালখোলা পৌঁছে মনে হল অনেক কম বলা হয়েছে জায়গাটির যানজট সম্পর্কে। ২ ঘন্টা লাগে ২ কিলোমিটার পেরোতে!’’
তাঁর কথায়, ‘‘কোন দেশে বাস করছি বলুন তো? পুলিশ-প্রশাসন কী করছে! বেঙ্গল টু বেঙ্গল রোড দিয়ে কেন বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না বুঝি না।’’
রায়গঞ্জের কুমারডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা গুলজার হোসেন ডালখোলার ভূষামণি-১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘যানজট চলাকালীন অনেক সময় বাস, ভুটভুটি, ট্রেকার ও ট্রাক্টর উল্টো লেনে ঢুকে তাড়াতাড়ি যেতে চায়। তাতেই জাতীয় সড়কে গাড়ির জট বাড়ে।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy